• কেসের হুমকি অহরহ, বাড়ির বাইরে লেগে থাকত গাড়ির লাইন, ডোমজুড়-কাণ্ডের শ্বেতা ‘প্রভাবশালী’ও!
    এই সময় | ০৮ জুন ২০২৫
  • বাড়িতে আটকে রেখে সোদপুরের এক তরুণীকে নির্যাতনের ঘটনায় এখনও ফেরার অভিযুক্ত আরিয়ান খান ও তাঁর মা শ্বেতা খান। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থায় কাজের টোপ দিয়ে হাওড়ার ডোমজুড়ে ৬ মাস আটকে রেখেছিলেন সোদপুরের এক তরুণীকে। মা-ছেলে মিলে এই ৬ মাসে তরুণীর উপর অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছেন বলে অভিযোগ। ডোমজুড়ে যে ফ্ল্যাটে মা-ছেলে ভাড়া থাকেন, সেখানকার প্রতিবেশীরা সাংঘাতিক সব দাবি তুলছেন মা-ছেলের বিরুদ্ধে। এলাকাবাসীর দাবি, শ্বেতা ওরফে ফুলটুসি বেগম অত্যন্ত প্রভাবশালী। অনেক দূর অবধি তাঁর হাত রয়েছে।

    হাওড়ার ডোমজুড় থানার বাঁকড়া দেওয়ান পাড়ায় একটি চার তলা ফ্ল্যাটের একতলায় বসবাস করেন শ্বেতা ও আরিয়ান। এই ঘটনার পরে থেকে ওই ফ্ল্যাটে তালা। অভিযোগ, আরিয়ান এবং শ্বেতা এলাকায় বেশ প্রভাবশালী। নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত বলেও দাবি এলাকার লোকজনের। কেউ প্রতিবাদ করলে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিতেন। থানা-পুলিশও করতেন। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকলেও দিনের পর দিন বাড়ি ভাড়ার টাকা দেননি তাঁরা।

    এমনও অভিযোগ, ওই তরুণীকে এনে ফ্ল্যাটের দোতলার একটি ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। সেই ফ্ল্যাট ভিতরে-বাইরে সিসিক্যামেরায় মুড়ে ফেলেন মা ও ছেলে। তাঁরা ঘরে বসে ওই তরুণীর গতিবিধি নজর রাখতেন। ইতিমধ্যেই শ্বেতার বেশ কিছু ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ‘লাস্যময়ী’ মা ও ছেলের ভয়ে পাড়ার লোকজন ত্রস্ত থাকতেন বলে জানাচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা।

    স্থানীয় এক বাসিন্দা রবিবার সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেন, ‘এই যে মুখ খুলছি, কেউ জানে না কাল-পরশু আমার নামে কেস আসবে কি না। ওই মহিলা সাংঘাতিক। ঘরের ভিতরে অনেক কিছু আছে। বাড়ির সামনে টাটা সুমোর লাইন লেগে থাকত।’

    বাঁকড়ার এই পাড়ার কমপক্ষে ২৫টি ছেলের নামে মিথ্যে কেস করেছেন শ্বেতা, এমনই অভিযোগ এলাকার লোকজনের। তাঁদের বক্তব্য, অবশেষে এই কেলেঙ্কারির পর্দা যখন ফাঁস হয়েছেই, এ বার থানা-পুলিশের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা দরকার। কী ভাবে এই মহিলা এতটা প্রভাবশালী হলেন, তাও এ বার সামনে আনা প্রয়োজন। স্থানীয়রা বলছেন, ভোটার তালিকায় শ্বেতার নাম মহসিনা বেগম। আবার ফুলটুসি বেগমেরও নাম। তবে শ্বেতা নামেই পরিচিতি তাঁর। উঠে আসছে, রাজনীতির সঙ্গে শ্বেতার যোগের কথাও।

    সোদপুরের বছর ২৪-এর এক তরুণীকে চাকরি দেওয়ার নামে দিনের পর দিন আটকে রেখে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠে শ্বেতা খান ও তাঁর ছেলে আরিয়ানের বিরুদ্ধে। ৬ জুন ডোমজুড়ের বাঁকড়ার ওই ফ্ল্যাট থেকে পালিয়ে যান তরুণী। গত ৬ মাসে ওই তরুণীকে এমন নির্যাতন করা হয়, প্রথমে মেয়েকে দেখে বাড়ির লোকজন চিনতেও পারেননি। সেই তরুণী এখন হাসপাতালে ভর্তি। খড়দহ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে পরিবার। তবে যে হেতু ঘটনাস্থল ডোমজুড়, তাই ব্যারাকপুর কমিশনারেটের তরফে অভিযোগপত্র সেখানে পাঠানো হয়েছে।

    নির্যাতিতা ওই তরুণীর বিয়ে হয়েছিল। স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তিন বছরের সন্তান নিয়ে বাপের বাড়িতে চলে আসেন। বাবা দিনমজুর, মা আয়ার কাজ করেন। নির্যাতিতা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থায় যোগ দেন বলে দাবি পরিবারের। এর পর মায় দু’য়েক আগে বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছিলেন, তিনি ভালো আছেন। যদিও বাড়িতে ফিরে এসে ওই নির্যাতিতা জানান, সে দিন শ্বেতা তাঁকে সেই কথা বলতে বাধ্য করেছিল। তবে এই ঘটনার শিকড় যে বহু দূর, টান পড়লে অনেক কিছুই যে উঠে আসতে পারে, তেমনটাই বলছেন এলাকার লোকজন।

  • Link to this news (এই সময়)