দু’জনেই একে অন্যের সম্বল। ভিড়ের মধ্যেও হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন। কিন্তু স্টেশনে ভিড়ের চাপ সামলাতে পারেননি। স্বামী-স্ত্রী একে অন্যকে হারিয়ে ফেলেন । দু মাস আগের ঘটনা। বর্ধমান স্টেশনে ভিড়ের মধ্যে ফুলবতী মণ্ডল (৭০)-কে এ ভাবে হারিয়ে ফেলেছিলেন তাঁর স্বামী শনিচর মণ্ডল (৭৮)। এর পর শনিচর স্ত্রীকে অনেক জায়গায় খুঁজেছেন। কিন্তু পাননি। অবশেষে হ্যাম রেডিও-র সাহায্যে শনিবার ফুলবতীর খোঁজ পায় তাঁর পরিবার। রবিবার সকালে মেদিনীপুরে এসে পৌঁছন হ্যাম রেডিও-র দুই সদস্য-সহ শনিচর মণ্ডল ও তাঁর দুই নাতি।
সূত্রের খবর, শনিচর বর্ধমানের গুড়াপ স্টেশনে সাফাই কর্মীর কাজ করেন। ডাক্তার দেখানোর জন্য স্ত্রীকে ভাগলপুর থেকে বর্ধমানে নিয়ে এসেছিলেন শনিচর। ডাক্তার দেখানোর পরে ৮ এপ্রিল হাওড়াগামী লোকাল ট্রেন ধরে বাড়ি ফেরার জন্য দু’জনেই গুড়াপ স্টেশনে যান। সেখানেই প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে স্ত্রী-কে হারিয়ে ফেলেন বৃদ্ধ। এ দিকে ফুলবতীও ট্রেনে উঠে যান। এর পর ১৭ এপ্রিল কোনও একটি ট্রেন ধরে মেদিনীপুর স্টেশনে পৌঁছন বৃদ্ধা।
পুলিশ সূত্রের খবর, মেদিনীপুর স্টেশনে পৌঁছে একা বসে কাঁদছিলেন ফুলবতী। রেল পুলিশ তাঁকে সেখান থেকে উদ্ধার করে কোতোয়ালী থানায় খবর দেয়। কোতোয়ালি থানা এবং মেদিনীপুর পুরসভার সহায়তায় বৃদ্ধার ঠাঁই হয় সেল্টার ফর আরবান হোমলেসে। সেটি মেদিনীপুর সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত। কিন্তু ভাষাগত সমস্যার কারণে প্রথমে কেউই বৃদ্ধার কথা বুঝতে পারছিলেন না। ধীরে ধীরে বৃদ্ধাশ্রমের কর্মীরা তাঁর থেকে সমস্ত বিষয়টি জানতে পারেন। কিন্তু তার পরেও কোনও ভাবেই ফুলবতীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছিল না।
পুলিশ জানিয়েছে, ৭ জুন মেদিনীপুর শহরের কয়েকজন সাংবাদিকের সহায়তায় বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ হ্যাম রেডিও-র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মাত্র আধঘণ্টার মধ্যেই হ্যাম রেডিও ক্লাবের তরফে বৃদ্ধার বাড়ির খোঁজ মেলে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। প্রিয়জনের খবর পেয়ে শনিবার রাতেই বিহারের ভাগলপুর থেকে মেদিনীপুরে রওনা দেন বৃদ্ধার পরিবার। এর পর রবিবার সকালে তাঁরা মেদিনীপুর শহরে পৌঁছন।
মেদিনীপুর পুরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান এবং পুলিশ-প্রশাসনের উপস্থিতিতে ফুলবতীকে তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে সেল্টার ফর আরবান হোমলেস থেকে বৃদ্ধাকে নতুন শাড়ি পরিয়ে মিষ্টিমুখ করে বিদায় জানানো হয়। স্ত্রী-কে এতদিন বাদে ফিরে পেয়ে খুশিতে চোখে জল চলে আসে শনিচরের। মেদিনীপুর পুরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান বলেন, ‘এর থেকে ভালো ঘটনা আর কী হতে পারে। আমরা সকলেই খুব খুশি। আরবান হোমলেসের কর্মী পূজা রানা-সহ মেদিনীপুরের সাংবাদিকদের এই উদ্যোগ সত্যিই অসাধারণ। হ্যাম রেডিও-কেও ধন্যবাদ জানাই।’