‘ইসলাম ধর্ম না মেনে গরিবদের অত্যাচার’, বাবা-মাকে খুনের কথা স্বীকার মেমারির ইঞ্জিনিয়ারের
প্রতিদিন | ০৯ জুন ২০২৫
সৌরভ মাজি, বর্ধমান: নিয়ম করে পাঁচ ওয়াক্ত নমাজ আদায়। আর তারপর গল্পের বই, খবরের কাগজে দিনভর ডুবে থাকছে। বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ও মা মমতাজ পরভিনকে খুনের অভিযোগে ধৃত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ছেলে হুমায়ুন কবীর ওরফে আসিফ বর্তমানে মেমারি থানার পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের গল্পের বই আর খবরের কাগজের আবদার পূরণে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। এদিকে, জেরায় বাবা-মাকে খুনের কথাও স্বীকার করেছে হুমায়ুন, এমনটাই দাবি পুলিশের। এমনকী খুনের মোটিভ সম্পর্কেও প্রাথমিকভাবে কিছুটা নিশ্চিত হয়েছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশের দাবি, জেরায় হুমায়ুন জানিয়েছে, তার বাবা-মা অপরাধী ছিল। তারা গরিব মানুষের উপরে অত্যাচার করত। তাদের দিয়ে জোর করে কাজ করাতো। কিন্তু সেভাবে টাকা দিতো না। ইসলাম যারা মানেন, তাঁরা এমন কাজ করতে পারেন না। বারবার সে বাবা-মাকে সতর্ক করলেও তাঁরা শোনেননি। সেই কারণে সে এই চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে বলে তদন্তকারীদের জেরায় জানিয়েছে হুমায়ুন। তবে এখনই মোটিভ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে নারাজ পুলিশ কর্তারা। তাকে আরও জেরা করতে চান তদন্তকারীরা। পুলিশ হুমায়ুনকে দিয়ে খুনের ঘটনার পুনর্নির্মাণ করাতে চায় পুলিশ। তখন হুমায়ুন কেমন আচরণ করে তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন পুলিশ কর্তারা।
গত ২৮ মে, বাবা-মাকে গলার নলি কেটে খুন করে হুমায়ুন। ঘরের ভিতর থেকে টেনে এনে রাস্তায় ফেলে দেয়। তার পর চম্পট দেয়। ওইদিন বিকেলে পৌঁছে যায় উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর একটি মাদ্রাসায়। সেখানে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। সেখানে ছুরি নিয়ে হামলায় চালিয়ে চারজনকে জখম করে। পুলিশ গ্রেপ্তার করে তাকে। তিনদিন বনগাঁ থানার পুলিশের হেফাজতে থাকার পর জেল হেফাজতে পাঠানো হয়। এদিকে, মেমারি থানার পুলিশ হুমায়ূনকে ‘শোন অ্যারেস্ট’ করতে বর্ধমানে আবেদন জানায়। আদালতের নির্দেশে গত বৃহস্পতিবার হুমায়ূনকে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে এনে বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। তারপর আদালতের নির্দেশে সাতদিনের পুলিশি হেফাজতে পায় মেমারি থানা।
ওইদিন আদালতে হুমায়ুন দাবি করে, “আল্লাহর দরবারে আমি নির্দোষ। এবার আদালতের বিচারে যা হবার হোক।” বনগাঁ থানার পুলিশের হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে বেশ হিংস্র আচরণ করেছিল হুমায়ুন। খাবারের থালা ছুড়ে ফেলা, সিসি ক্যামেরা ভেঙে দেওয়া, এমনকী পুলিশ আধিকিরিকদের ঘুষি মেরে চশমা ভেঙে দেওয়া, পায়ে আঘাত দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়েছিল সেখানে। সেই কারণে মেমারি থানার পুলিশ বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে। মোট ১২ জন পুলিশকর্মীকে নিয়োগ করা হয়েছে হুমায়ূনকে নজরে রাখতে। ২ জন পুলিশকর্মী সর্বক্ষণ লকআপে নজরদারি চালাচ্ছেন।