নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: গত মাসেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে সৈকতনগরী দীঘায় ধুমধাম করে উদ্বোধন হয়েছে জগন্নাথ মন্দির। তারপর থেকেই রাজ্যবাসীর অন্যতম ফেভারিট ডেস্টিনেশনকে ঘিরে আরও উন্মাদনা বেড়েছে। তবে, তা থেকে যেন কিছুটা বঞ্চিত পুরুলিয়ার বাসিন্দারা। পুরুলিয়া থেকে দীঘা যাওয়ার সরাসরি কোনও ট্রেন নেই। রেল যে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ করবে, সেই ভরসাও নেই বাসিন্দাদের। পুরুলিয়া থেকে দীঘা যাওয়ার জন্য নেই সরকারি বাসও! এই পরিস্থিতিতে দৈনিক অন্তত একটি সরকারি বাস চালুর দাবি তুলতে শুরু করেছেন বাসিন্দারা। বাসিন্দাদের দাবি মেনে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বও রাজ্যের কাছে তদ্বির শুরু করেছে।
পুরুলিয়া থেকে দীঘাগামী সরকারি বাস চালুর ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তৈরি দীঘার জগন্নাথ মন্দির ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলে দিয়েছে। শুধু রাজ্যের নয়, রাজ্যের বাইরের বাসিন্দাদের মধ্যেও এনিয়ে ব্যাপক উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। হাজার হাজার ভক্ত আসছেন এই মন্দিরে। উত্তরবঙ্গ থেকে ইতিমধ্যেই একাধিক বাস চালু হয়েছে। এবার দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও এসবিএসটিসি এই বাস পরিষেবা চালু করেছে। তাঁর সংযোজন, ইতিমধ্যেই বহরমপুর, তারাপীঠ, মেমারি থেকে দীঘাগামী বাস চালু হয়েছে। বর্ধমান, দুর্গাপুর আসানসোল থেকে তো বাস রয়েইছে। এবার খুব শীঘ্রই ঝাড়গ্রাম কাটোয়া, পুরুলিয়া থেকেও বাস চালু হবে।
পুরুলিয়া থেকে দীঘাগামী বাস চালু হলে এলাকার পর্যটনেরও আরও প্রসার ঘটবে বলে দাবি পরিবহণ কর্তাদের। সূত্রের খবর, পুরুলিয়া-দীঘা বাসটি বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, মেদিনীপুরের উপর দিয়ে যাবে। এরফলে পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুরের মানুষও সহজেই পুরুলিয়া আসতে পারবেন। পুরুলিয়ার জেলা সম্পাদক তথা কাউন্সিলার বিভাসরঞ্জন দাস বলেন, পুরুলিয়া থেকে দীঘাগামী একটি বাসের অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। আমি নিজেও এসবিএসটিসির চেয়ারম্যান এর কাছে তদ্বির করেছিলাম। শীঘ্রই বাস চালুর ব্যাপারে তিনি কথা দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, পুরুলিয়া থেকে দীঘা যাওয়ার বাসের দাবি দীর্ঘদিনের। কয়েক বছর আগে যখন মানবাজারে এসবিএসটিসি বাস ডিপোর উদ্বোধন হয়, তখন মানবাজার থেকে দীঘাগামী বাস চালুর ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি মিলেছিল। যদিও তা এখন বিশ বাঁও জলে। ওই মহকুমার কিছু পদস্থ নেতার নিজেদের একাধিক বাস রয়েছে। তাঁদের ব্যবসায় যাতে মন্দা না আসে, সেই কারণে তাঁরা দূরপাল্লার সরকারি বাস চালু করতে দেননি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের একাংশের। তবে, পুরুলিয়ার ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে হয়তো এত অভিযোগ থাকত না। কিন্তু দীঘা যাওয়ার সরাসরি কোনও ট্রেন নেই। গেলে সেই খড়গপুর দিয়ে ঘুরে যেতে হবে। তাও ট্রেনের সংখ্যা হাতেগোনা। চলতি বছর অবশ্য মালদা-দীঘা বিশেষ ট্রেন চালু করেছিল দক্ষিণ-পূর্ব রেল। যেটি পুরুলিয়ার উপর দিয়ে যায়। যদিও ট্রেনটি কয়েকটি নির্দিষ্ট দিনের জন্য। এপ্রিল মাসে দু’দিন, মে মাসে পাঁচদিন জুন মাসে মাত্র দু’দিন এই ট্রেন চলবে। ফলে বাসের দাবি যে অত্যন্ত সঙ্গত, তা অস্বীকার করার উপায়ও নেই পরিবহণ কর্তাদের।