ঝাড়গ্রামে হাতি সমস্যা মেটাতে নয়া প্রকল্প, বরাদ্দ দেড় কোটি
বর্তমান | ০৯ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: ঝাড়গ্রাম জেলায় একাধিক বড় রাস্তা, চেক ড্যাম সেতু নির্মাণ হয়েছে। উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জনবসতির বিস্তার ঘটছে। তবে, সার্বিক উন্নয়নে হাতির বিষয়টি উপেক্ষিতই থেকে গিয়েছে। যার অনিবার্য পরিণতিতে হাতি-মানুষের সংঘাত বেড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঝাড়গ্রাম বনবিভাগ জামবনীর গিধনি এলাকায় বনভূমি বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রকল্পে দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। পুকুর খননের পাশাপাশি ফলের গাছ ও ঘাস লাগানো হবে। কাঁটাতার দিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা ঘিরে হাতিদের রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ঝাড়গ্রামের ডিএফও উমর ইমাম বলেন, জামবনী ব্লকের গিধনি এলাকায় বনভূমি বাড়ানো হবে। বিস্তীর্ণ এলাকায় ফেন্সিং করা হবে। হাতির খাবার ও জলের যাতে অভাব না হয়, তার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। হাতির পালকে গিধনি সংলগ্ন বনভূমি এলাকায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।
ঝাড়গ্রাম জেলার পশ্চিম অংশে রয়েছে জঙ্গল ও পাহাড়ী এলাকা। জেলার অন্যান্য অংশের তুলনায় এখানে জঙ্গলের ঘনত্ব বেশি। লোকবসতি অন্য অংশের তুলনায় কম। শতাধিক হাতির দলকে জেলার পশ্চিমাংশে আবদ্ধ করে রাখলে সংঘাত অনেকটাই কমবে। ফসলের ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি রোধ করা সম্ভব হবে। জামবনী ব্লকের পার্শ্ববর্তী বেলপাহাড়ীজুড়ে দীর্ঘ বনাঞ্চল রয়েছে। বনভূমিজুড়ে হাতিরা সেখানে নিরাপদে বিচরণ করতে পারবে। একটি রেঞ্জ থেকে অন্যটিতে হাতির পালকে তাড়ানোর প্রয়োজন হবে না। গিধনির বনভূমি এলাকায় ১৫টি পুকুর খনন করা হবে। জঙ্গলজুড়ে বড় বড় ঘাস ও নানা ধরনের ফলের গাছও লাগানো হবে। চার দশক আগেও ঝাড়গ্রামে হাতির উপদ্রব সেভাবে দেখা যেত না। দলমা পাহাড় থেকে আসা হাতির দল জঙ্গলমহলে কিছুদিন থেকে আবার ফিরে যেত। ঝাড়খণ্ড-ওড়িশা দিয়ে হাতি চলাচলের পুরনো রাস্তা বন্ধ হওয়ায় সমস্যার সূত্রপাত হয়। ময়ূরঝর্ণ রিজার্ভ ফরেস্ট প্রকল্পের কাজ এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। জেলার বনবিভাগ বিকল্প হিসেবে জামবনীর গিধনি এলাকায় এবার বনভূমি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জেলার পূর্ব, দক্ষিণ ও মধ্যবর্তী এলাকা থেকে হাতির পালকে পশ্চিম দিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। প্রকল্পের বাস্তবায়নে টাকা বরাদ্দ হয়ে গিয়েছে। যদিও এই উদ্যোগ কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। গত দু’দশক ধরে হাতির খাবারের অভ্যাস অনেকটাই বদলে গিয়েছে। ফসলের সঙ্গে আম ও কাজু হাতির প্রিয় খাবার হয়ে উঠেছে। হাতির পাল এখন একাধিক ছোট দলে ঘুরে বেড়াতে অভ্যস্থ। জেলার পরিচিত হাতি ‘রামলাল’কে শহর এলাকায় নির্বিবাদে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। অন্য হাতিদেরও মাঝেমধ্যে তার সঙ্গে দেখা যাচ্ছে।
জেলার বনবিভাগের আধিকারিকরা অবশ্য এই উদ্যোগ নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী। বনবিভাগের প্রাক্তন কর্তা সমীর মজুমদার বলেন, জেলার পূর্ব, দক্ষিণ ও মধ্যবর্তী এলাকায় হাতির পাল ঘুরে বেড়াচ্ছে। সংঘাত এই এলাকায় সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। পশ্চিম দিকে হাতির পালকে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি কমবে বলেই মনে করছি। শুধু নির্দিষ্ট এলাকায় আবদ্ধ করে রাখলেই হবে না। সেই জন্য হাতির পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থাও করতে হবে।