শিব-পার্বতীর বিয়ে না হলে সাতপাকে বাধা বক্রেশ্বর গ্রামের যুবক-যুবতীদের
বর্তমান | ০৯ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: হাইটেক যুগে সমাজ ও সভ্যতার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জেও আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। সামাজিক রীতিনীতিতেও বহু ক্ষেত্রে বদল নজরে আসে। যদিও গোহালীয়াড়া পঞ্চায়েতের বক্রেশ্বর গ্রামের বাসিন্দারা আজও শতবর্ষ পুরোনো রীতি আঁকড়ে রয়েছেন। প্রচলিত রীতি অনুসারে ওই গ্রামে এখনও শিবের বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত ফাল্গুন মাসে কোনও ছেলে অথবা মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান হয় না। কেন এমন রীতি? জবাবে গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এই রীতি প্রচলনের নেপথ্যে কী কারণ রয়েছে তা জানা নেই। এমনকি, কার হাত ধরে এই রীতির প্রচল,ন তাও অজানা গ্রামবাসীদের কাছে। তবে তাঁরা পূর্বপুরুষের দেখানো পথই আজও অনুসরণ করে চলেছেন। বক্রেশ্বর মন্দিরের এক পুরোহিত প্রকাশ চৌধুরী বলেন, ‘শুরু থেকেই বক্রেশ্বর গ্রামে এই রীতি প্রচলিত রয়েছে। আজও গ্রামের সাধারণ মানুষ সেই রীতি বজায় রেখেছেন।’
বীরভূম জেলার সদর শহর সিউড়ি থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বক্রেশ্বর গ্রাম। ওই গ্রামেই রয়েছে বক্রেশ্বর মন্দির। এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে লোকমুখে নানা পৌরাণিক ঘটনার কথা শোনা যায়৷ বছর ভর ওই মন্দির দর্শনে দূরদূরান্ত থেকে পুণ্যার্থীদের আনাগোনা চলতে থাকে। গ্রামবাসীরাও বিভিন্ন সময় মন্দিরে পুজো অর্চনা করেন। ফাল্গুন মাসে কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশীতে ওই মন্দিরে ধূমধাম করে শিবরাত্রি পালিত হয়। বিশেষ দিনে ওই মন্দিরে দেবাদিদেব মহাদেবের বিয়ের আসর বসে। মা পার্বতীর সঙ্গে শিবের বিয়ে সম্পন্ন হয়। নিষ্ঠাভরে মন্দিরের পুরোহিতরা পুজো অর্চনার মাধ্যমে সেই অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন। গোটা মন্দির চত্বর আলোক মালায় সেজে উঠে। গ্রামের সাধারণ মানুষরাও সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। দূরদূরান্ত থেকেও বহু মানুষ সেখানে সমবেত হন। ফাল্গুন মাসে শিবরাত্রি দিন শিবের বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পরপরই বক্রেশ্বর গ্রামের ছেলে-মেয়েদের বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গিয়েছে, শিবরাত্রির আগে বিয়ের তারিখ থাকলেও তা বাদ দেওয়া হয়। ফলত, ফাল্গুন মাসে ছেলে-মেয়েদের বিয়ের জন্য গ্রামবাসীরা শিবের বিয়ের অনুষ্ঠান পার হওয়ার অপেক্ষা করেন। স্থানীয় আরতি বাগদি বলেন, পূর্বপুরুষের মুখে শোনা ফাল্গুন মাসে শিবের বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত গ্রামের কোনও ছেলে কিংবা মেয়ের বিয়ে দেওয়া যায় না। কেন এই রীতির প্রচলন রয়েছে তা অবশ্য জানি না। তবে আমরা এখনও সেই রীতি মেনে চলি।
শিবরাত্রির দিন শিব-পার্বতীর বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পরই গ্রামের ছেলে মেয়েদের বিয়ের আসর বসে। তুফানি বাগদি বলেন, এই রীতি বহু পুরোনো। সঠিক কবে থেকে এবং কী কারণে এই রীতির প্রচলন হয়েছে, তা আমাদের জানা নেই। তবে, ফাল্গুন মাসে শিবরাত্রি আগে আমাদের গ্রামে কোনও বিয়ের অনুষ্ঠান হয় না। তবে শুধু প্রবীণরা নয়, গ্রামের নবীনরাও সেই রীতিতেই বিশ্বাসী। -নিজস্ব চিত্র