শহর থেকে দূরত্ব ৪ কিমি, রোগী নিয়ে যেতে ঘুরতে হয় ২০ কিমি, নবগ্রাম ছাড়ছেন বাসিন্দারা
বর্তমান | ০৯ জুন ২০২৫
সংবাদদাতা, কাটোয়া: কেতুগ্রামের নবগ্রাম থেকে বাপ ঠাকুরদার তিন ফসলি জমি বেচে শহরে পাড়ি দিচ্ছেন বাসিন্দারা। কারণ, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। অথচ কাটোয়া শহর লাগোয়া এই গ্রাম। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে অজয় নদ। কিন্তু এখনও গ্রাম থেকে রোগী নিয়ে হাসপাতাল যেতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নবগ্রাম থেকে কাটোয়া শহরের দূরত্ব মাত্র চার কিলোমিটার। কিন্তু রাতে কেউ অসুস্থ হলে তাকে নিয়ে ২০ কিমি ঘুরে যেতে হয় হাসপাতালে।
কেতুগ্রাম-২ ব্লকের নবগ্রামে একটিই সংসদে ভোটার রয়েছেন ১৩৪৩ জন। গ্রামে প্রায় পাঁচশ পরিবারের বসবাস। গ্রামের প্রবেশ পথেই কাটোয়া-আমোদপুর শাখার রেললাইন চলে গিয়েছে। বাসিন্দাদের মূল জীবিকা সব্জি চাষ। ইংরেজ আমল থেকে লড়াই করেও গ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত করতে পারা যায়নি। আগে বাসিন্দাদের ঝুঁকি নিয়ে রেললাইনের পাশ দিয়ে যাতায়াত করতে হতো। বহু আন্দোলনের ফলে কাটোয়া-আমোদপুর শাখার নবগ্রামে রেল লাইন থেকে সাড়ে তিন ফুটের একটি সেতু তৈরি হলেও বাসিন্দাদের সমস্যা মেটেনি। শুভেন্দু ঘোষ বলেন, ওই সেতুটা ছ’ ফুট চওড়া করবে বলে রেল থেকে আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু এখনও সেতু দিয়ে একটা সাইকেল গেলে পাশে আর একটি সাইকেল নিয়ে যাওয়া যায় না। গ্রামে এখনও অ্যাম্বুলেন্স ঢোকে না। কেউ অসুস্থ হলে তাকে কাটোয়া শহরে নিয়ে যেতে হিমশিম খেতে হয়।
বিকল্প হিসাবে গ্রামের পশ্চিম দিকে এসআরডিএ একটা রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে। ওই রাস্তা ধরে নবগ্রাম থেকে তরালিসেনপাড়া হয়ে বড় পুরুলিয়া গ্রাম হয়ে চরখি সেতুতে ওঠা যায়। তারপর কাটোয়া শহরে ঢোকা যায়। কিন্তু ওই রাস্তাতেও সমস্যা রয়েছে। গ্রাম থেকে বেরিয়েই একটা বড় কাঁদর রয়েছে, তার উপর একটা অস্থায়ী সেতু রয়েছে। বর্ষায় জল বাড়লে ওই সেতু ডুবে যায়। নবগ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান ব্রজগোপাল ঘোষ বলেন, গ্রাম থেকে বাইক বা সাইকেল ছাড়া রোগী নিয়ে যাওয়া যায় না। আবার বিকল্প রাস্তা দিয়ে যেতে গেলেও ২০ কিমি ঘুরে হাসপাতালে যেতে হয়। তাই গ্রাম ক্রমশ ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
গ্রামের বাসিন্দা দেবকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, ননীগোপাল ঘোষ বলেন, কাটোয়া শহরের গায়ে বাস করলেও শহরের সুযোগ সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত। আগে তো গ্রাম থেকে বের হওয়াই যেত না৷ এখন তো সাইকেলে করে ছেলেমেয়েরা স্কুল, কলেজে যাচ্ছে। রেল সেতু পেরিয়ে গোয়াই গ্রামের কাছে একটা সাবওয়ে তৈরি করেছে রেল। ওটাও দুর্ভোগের নামান্তর। জল জমে থাকে। নবগ্রাম স্টেশনে কাটোয়া যাওয়ার ট্রেন আসে বটে। তবে তা সংখ্যায় কম। চাষিরা ২০ কিমি ঘুরে শহরে গিয়ে সব্জি বিক্রি করেও দেরি হওয়ার জন্য সঠিক দাম পান না।
কেতুগ্রাম-২ তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বিকাশ মজুমদার বলেন, ওই গ্রামে চারচাকা যাওয়ার রাস্তায় কাঁদরে যে অস্থায়ী সেতু রয়েছে, সেটি স্থায়ী করার জন্য আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দরবার করেছি। ওটা হয়ে গেলে সমস্যা মিটে যাবে। তবে বাম আমলে নবগ্রাম উপেক্ষিতই ছিল।