সংবাদদাতা, কালনা: দু’টি চোখ একশো শতাংশ দৃষ্টিহীন। এই অবস্থায় ২৫ বছর ধরে একাই একটি স্টেশনারি দোকান চালিয়ে সংসার সামলে আসছেন কালনা ধাত্রীগ্রামের বাসিন্দা নিতাই শীল। পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই নিতাইবাবু স্টেশনারি দোকান চালানোর পাশাপাশি নানা ধরনের সাজা পান বিক্রি করেন। তাঁর পান খেতে দূর-দুরান্ত থেকে মানুষ ভিড় করেন। দোকান চালিয়ে দুই মেয়েকে পড়াচ্ছেন। তাঁর অদ্ভুত ক্ষমতা ও অদম্য ইচ্ছাশক্তি থেকে তাজ্জব এলাকার বাসিন্দা থেকে শুরু করে ক্রেতারা।
কালনা থানার ধাত্রীগ্রাম উত্তরপাড়ার বাসিন্দা নিতাই শীল জন্ম থেকে একটি চোখে দেখতে পেতেন না। প্রাইমারি স্কুল পর্যন্ত পড়াশোনা করে একটু বড় হতেই অভাবের সংসারে হাল ধরতে ধাত্রীগ্রামের গ্রামকালনা মোড়ে কাছে একটি চায়ের দোকান খোলেন। এক চোখ দিয়ে কোনও রকমে দোকান চালিয়ে অভাবের সংসারের হাল ধরেছিলেন। হঠাৎ একদিন উনুনের গরম কয়লা ছিটকে ভালো চোখে এসে পড়ে। রাজ্য সহ ভিনরাজ্যে গিয়েও চোখ ভালো হয়নি। এদিকে সংসারে নেমে এসেছে অভাব। দু’টি চোখে একশো শতাংশ দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে অথৈই জলে পড়েন নিতাইবাবু। চায়ের দোকানকে স্টেশনারি দোকানে সাজিয়ে তোলেন। দৃষ্টিহীন অবস্থায় একটি দু’টি জিনিস বিক্রিবাট্টা করতে করতে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এখন দোকান ভর্তি মাল তোলেন। বিক্রিবাটাও বেশ ভালোই। কাস্টমারদের চাহিদা অনুযায়ী ঠান্ডা পানীয় থেকে ক্যাটবেরি, বিস্কুট, মাথার তেল থেকে শ্যাম্পু, সাবান প্রভৃতি নিমেষে ক্রেতাদের হাতে তুলে দেন তিনি। বুঝে নেন জিনিসের মুল্যও। অতিরিক্ত অর্থ দিলেও সঠিক ভাবে হিসেব বুঝে বাকি অর্থ ফেরত দেন। এছাড়াও বেনারসি পান থেকে মিঠা পান, জর্দা পান এলাকার সকলের কাছে জনপ্রিয়।
নিতাইবাবু বলেন, ‘দু’টি চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্রথমে ভেঙে পড়েছিলাম। কিন্তু সংসারের অভাবের কথা ভেবে দোকান চালানোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়। একার হাতেই মাল কিনি। দোকানে সাজিয়ে রাখি। কেনার সময় কোনও মাল কেমন, তা উপলব্ধি করে বুঝে নিই। কোথায় রাখছি তাও মনে রাখতে হয়। টাকায় থাকা ব্লাইন্ড সাইন হাতের স্পর্শে বুঝে টাকা পয়সার হিসেব ঠিক রাখি।’
আপনি তো চোখে দেখেন না, জিনিস কিনে কেউ টাকা না দিয়ে ঠকিয়ে চলে যান না? নিতাইবাবু বলেন, ‘সবটাই মানবিকতা উপর নির্ভর। তবে সচরাচর কেউ ঠকায় না, তবে দুষ্টু লোকও আছে। তা সংখ্যায় খুবই কম। সরকার থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পাই। সংসারে অভাব থাকলেও এই দোকানের আয় থেকে কোনও রকমে সংসার চলে। মেয়েদের একটা কর্মসংস্থান হলে ভালো হতো।’ এলাকার বাসিন্দা পঞ্চায়েত প্রধান অশোক চৌধুরী বলেন, ‘নিতাইদা দু’টি চোখে দৃষ্টি হারিয়ে অপরের উপর নির্ভর না হয়ে যে ভাবে দোকান চালিয়ে আসছেন, তা নজিরবিহীন।’