• বাঁকুড়া জেলার প্রাথমিক স্কুলগুলিতে পড়ুয়া-শিক্ষক ভারসাম্য ঠিক রাখতে ব্যাপক বদলি
    বর্তমান | ০৯ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: চিত্র-১: গঙ্গাজলঘাটি ব্লকের গোপীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৪৪ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। অথচ সেখানে তিনজন শিক্ষক ছিলেন। ওই ব্লকের বিহারজুড়িয়া গার্লস হাই স্কুলে ৭৮ জন ছাত্রী থাকলেও শিক্ষক সংখ্যা মাত্র ২। গোপীপুরের স্কুল থেকে একজন শিক্ষককে বিহারজুড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়। 

    চিত্র ২: তালডাংরা ব্লকের ঘোষের গ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৯ জন ছাত্রের জন্য ছিলেন তিনজন শিক্ষক। অথচ ওই ব্লকেরই বলরামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২১ জন ছাত্রের জন্য ছিলেন মাত্র একজন শিক্ষক। ফলে সেখানকার ঘাটতি মেটাতে ঘোষের গ্রাম থেকে একজন শিক্ষককে বলরামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়। 

    বাঁকুড়া জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র-শিক্ষক ভারসাম্য বজায় রাখতে শিক্ষকদের ব্যাপক হারে বদলি করা হচ্ছে। শতাধিক স্কুলে এভাবে সমস্যা মিটেছে বলে জেলা শিক্ষাদপ্তর জানিয়েছে। আরও কোনও বিদ্যালয়ে ওই ধরনের সমস্যা রয়েছে কি না, তা আধিকারিকরা খতিয়ে দেখছেন। এদিকে, বদলির ফলে কেউ বাড়ির কাছাকাছি সুবিধাজনক জায়গায় যাচ্ছেন। কোনও শিক্ষক আবার বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরের স্কুলে বদলি হচ্ছেন। তার ফলে বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। যদিও অভিভাবকরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে বাঁকুড়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান শ্যামল সাঁতরা বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬০:২ অনুপাতে ছাত্র-শিক্ষক থাকার কথা। ওই অনুপাত বজায় রাখতে আমরা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বদলি করছি। বদলির সময়ে শিক্ষকদের সুবিধে-অসুবিধের কথা মাথায় রাখা হচ্ছে। যথাসম্ভব পছন্দের জায়গাতেই তাঁদের পাঠানো হচ্ছে। 

    বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দা এক শিক্ষক বলেন, বদলির ফলে আমি বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছি। ফলে স্কুলে যাতায়াত করতে আমার সুবিধে হচ্ছে। তবে আমার এক বন্ধু বাড়ি থেকে দূরের স্কুলে বদলি হয়েছেন। তিনি কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন। সামগ্রিকভাবে সুষ্ঠু পঠনপাঠনের স্বার্থে এই বদলি জরুরি ছিল। 

    জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়ায় বর্তমানে ৩৫৬৯টি স্কুল রয়েছে। জেলায় শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন ৯৬৬২ জন। জেলার প্রায় ৭০০ বিদ্যালয়ে শিক্ষক উদ্বৃত্ত ছিল। ওইসব স্কুল থেকে শিক্ষকদের অন্যত্র বদলির প্রক্রিয়া শিক্ষাদপ্তর শুরু করে। তবে কোনও স্কুলে আগামী দিনে শিক্ষক অবসর নেবেন, এমন সম্ভাবনা থাকলে বদলির ক্ষেত্রে কিছুটা ধীরে চলো নীতি নেওয়া হয়েছে। আশু নিয়োগ না হলে ওইসব স্কুলে অদূর ভবিষ্যতে শিক্ষকের ঘাটতি হতে পারে বলে দপ্তরের আধিকারিকরা আশঙ্কা করছেন। সেই কারণে বিষয়টি নিয়ে তাঁরা সতর্ক রয়েছেন। এমনকী প্রতিটি স্কুলে যাতে অন্তত দু’ জন শিক্ষক থাকেন, সেদিকেও নজর রাখা হয়েছে। কারণ ‘সিঙ্গল টিচার’ স্কুলে পঠনপাঠন চালানো মুশকিল হয়ে পড়ে। কোনও কারণে ওই শিক্ষক বিদ্যালয়ে যেতে না পারলে, পঠনপাঠন দূর অস্ত, শ্রেণিকক্ষের তালা খোলার কেউ থাকে না। ফলে ৬০ জন ছাত্রপিছু দু’ জন শিক্ষক থাকার নিয়ম অনুসরণ করলেও কোনও বিদ্যালয়ে ১০ জন ছাত্র থাকার পরেও দু’ জন শিক্ষক রাখতে শিক্ষাদপ্তর বাধ্য হচ্ছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)