• শুকিয়ে কাঠ মুরগুমা, বাঁধের চরে চরছে গোরু ও ছাগল, তীব্র জলসঙ্কটে ঝালদা
    বর্তমান | ০৯ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: জল শুকিয়ে গবাদি পশুর চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে পুরুলিয়ার মুরগুমা জলাধার। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে সেখানে গিয়ে হতাশ হচ্ছেন পর্যটকরা। তাছাড়া এই জলাধারের উপর ঝালদা মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ নির্ভরশীল। কৃষিকাজ থেকে দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য ঝালদাবাসীর কাছে মুরগুমার গুরুত্ব অপরিসীম। এই জলাধারের জল পরিস্রুত করে সরবরাহ করা হয় ঝালদা শহরে। কিন্তু বর্তমানে সংস্কারের অভাবে মুরগুমার জল তলানিতে ঠেকেছে। জলাধারের যা অবস্থা, তাতে আগামীদিনে ঝালদার বিস্তীর্ণ এলাকায় জল সঙ্কটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। দ্রুত এই জলাধার সংস্কারের দাবি জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। 

    পুরুলিয়ার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র অযোধ্যা পাহাড়ের অদূরে মুরগুমা জলাধার। ড্যামের অপরূপ সৌন্দর্য মোহিত করে পর্যটকদের। কিন্তু বর্তমানে ক্রমশই শোভা হারাচ্ছে মুরগুমা। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, ১৯৬০ নাগাদ এই জলাধার তৈরি শুরু হয়েছিল। তারপর থেকে ৬০ বছর অতিক্রান্ত হলেও জলাধারটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পাহাড় থেকে নেমে আসা জল ড্যামে ধরে রাখতেও কোনও পরিকল্পনা করেনি প্রশাসন। সেই কারণেই জলাধারের এই দশা বলে দাবি স্থানীয়দের। জল শুকিয়ে যাওয়ায় ড্যামের পরিধি ক্রমশই ছোট হয়ে গিয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বহু লড়াই আন্দোলনের ফসল এই ড্যাম।  অথচ প্রশাসনের উদাসীনতায় তা নষ্ট হতে বসেছে। অবিলম্বে এর সংস্কারের প্রয়োজন। 

    স্থানীয় বাসিন্দা শান্তু মুড়া বলেন, ১৯৫৫-৫৬ সাল থেকে এই ড্যামের দাবিতে লড়াই আন্দোলন শুরু হয়। মুরগুমা গ্রামের বহু মানুষ সেই আন্দোলনে ছিলেন। অনশনে বসেছিলেন শুকদেব কর্মকার, নিবারণ কর্মকাররা। জেল পর্যন্ত খাটতে হয় তাঁদের। আন্দোলনের ফল স্বরূপ এই ড্যাম তৈরির কাজ শুরু হয় ১৯৬১-৬২ সাল নাগাদ। কাজ শেষ হয় ১৯৮২ সালে। কিন্তু সেই ড্যামের আর সংস্কার হয়নি। যে জলাধারে একসময় ৪০-৫০ ফুট জল ধরত, পাহাড়ের গা থেকে মাটি, পাথর ধসে এখন তার জলধারণ ক্ষমতা কমে গিয়েছে। এরফলে কৃষিকাজ থেকে শুরু করে পানীয় জলেরও খুব অসুবিধা হচ্ছে। আমরা জলাধার সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি। আরেক বাসিন্দা দোলগোবিন্দ মাহাত বলেন, এ ব্যাপারে আমরা বহুবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। ড্যামের জলধারণ ক্ষমতা কমেছে। বর্ষার জল ধরে রাখতে পারছে না। প্রশাসনের তরফে আশ্বাস মিললেও সুরাহা হয়নি আজও। এনিয়ে প্রশাসনের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাত বলেন, ওই ড্যামের সংস্কার করে কীভাবে তা মানুষের ব্যবহারযোগ্য করা যায় এবং সমস্যার সমাধান করা যায় সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)