• ঈদে মন্দা কাটল নবাবি তালুকে, ভিড়ে খুশি পর্যটনে যুক্ত বিভিন্ন পেশার মানুষ
    বর্তমান | ০৯ জুন ২০২৫
  • সংবাদদাতা, লালবাগ: ঈদ উপলক্ষ্যে গত দুই মাসের মন্দা কাটিয়ে চেনা ছন্দে ফিরল সাবেক নবাবি তালুক মুর্শিদাবাদ । রবিবার সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপাশি প্রতিবেশী নদীয়া ও বীরভূম জেলা থেকে ট্রেন, বাস, ছোট গাড়িতে চেপে দলে দলে মানুষ দর্শনীয় স্থানগুলিতে ভিড় জমাতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নবাবের শহরে ভিড় বাড়তে থাকে। রাত পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন রাস্তায় দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। হাজারদুয়ারি প্রাসাদ, কাটরা মসজিদ, কাঠগোলাপ বাগান, মোতিঝিল প্রকৃতি তীর্থ, জগৎশেঠের বাড়ি, নশিপুর রাজবাড়ি প্রভৃতি স্পটে রীতিমতো মানুষের ঢল নামে। দিনভর রাস্তায় মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। ভিড় সামলাতে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিসকে হিমশিম খেতে হয়। কোনওপ্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ভ্রাম্যমাণ পুলিসের শহরের রাস্তায় নজরদারির পাশাপাশি ট্যুরিস্ট স্পটগুলিতে পুলিস মোতায়েন ছিল। একাধিক রাস্তায় অস্থায়ী পুলিস বুথ খোলা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষ্যে দর্শনার্থীদের ঢল নামায় পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন পেশার মানুষের মুখে চওড়া হাসি। তাদের দাবি, আগামী আরও বেশ কয়েকদিন প্রচুর সংখ্যায় মানুষের সমাগম হবে। লালবাগ মহকুমা পুলিস আধিকারিক আকুলকর রাকেশ মহাদেব বলেন, পর্যটকদের ভিড় সামলাতে শহরের রাস্তায় প্রচুর পুলিস মোতায়েন করা হয়েছে। যানজট এড়াতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় টোটোর নো-এন্ট্রি করা হয়। বাইকের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে শহরের একাধিক রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়া হয়। মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে উইনার্স টিম দর্শনীয় স্থানগুলিতে পেট্রলিং করেছে। এদিকে মুর্শিদাবাদ পুরসভার পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি ট্যুরিস্ট সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলায় অ্যাম্বুলেন্স ও দমকলের একটি ইঞ্জিন মজুত রাখা হয়েছে। 

    ঈদ উৎসবে দিন তিনেক মুর্শিদাবাদের দর্শনীয় স্থানগুলিতে দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা গিয়েছিল। তারপর গত দুই মাস ধরে একপ্রকার পর্যটকশূন্য ছিল মুর্শিদাবাদ। স্বাভাবিকভাবেই ঈদে  দর্শনীয় স্থানগুলিতে ব্যাপক ভিড়ের আশা করেছিল পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন মহল। প্রত্যাশা মতো পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন পেশার মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে রবিবার মানুষের ঢল নামে দর্শনীয় স্থানগুলিতে। 

    রামপুরহাট থেকে ট্রেনে চেপে বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে লালবাগে ঘুরতে এসেছিলেন উসমান আলি। তিনি বলেন, বন্ধুদের সঙ্গে প্রথমবার লালবাগ ঘুরতে এলাম। হাজারদুয়ারি, কাটরা মসজিদ, কাঠগোলাপ বাগান সহ একাধিক স্পট দেখেছি। দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেরে মোতিঝিলে যাচ্ছি। ওখানে কয়েক ঘণ্টা কাটিয়ে সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরব। স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে মোতিঝিলে এসেছিলেন বেলডাঙার তাজিরুল শেখ। তিনি বলেন, জেলার বাসিন্দা হলেও আগে মাত্র দু’বার এখানে এসেছিলাম। হাজারদুয়ারির গাইড পোখরাজ শেখ বলেন, প্রতি বছর ঈদের কয়েকটা দিন ট্যুরিস্ট স্পটগুলিতে ভালো ভিড় হয়। শনিবার ও রবিবার সব দর্শনীয় স্থানে প্রচুর মানুষের ভিড় রয়েছে। টাঙাচালক সোহেল শেখ বলেন, প্রত্যাশার বেশি পর্যটক সমাগম হয়েছে। মোতিঝিলের কর্মী সিরাজুল শেখ বলেন, সকালের দিকে ভিড় হাজারদুয়ারি ও কাঠগোলাপ বাগানে ছিল। দুপুরের পর থেকে মোতিঝিলে দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেন। মুর্শিদাবাদ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, মুর্শিদাবাদ জেলার প্রচুর মানুষ পরিযায়ী শ্রমিক। এই উৎসবে অনেকেই বাড়ি ফিরে আসেন। কাজেই একটানা বেশ কয়েকদিন পর্যটক সমাগম হয়। স্বাভাবিকভাবেই পর্যটনের উপর নির্ভরশীল মানুষজন আর্থিকভাবে উপকৃত হন। 

     বিকেলে সূর্য নসিপুরের নারকেলতলা ঘাটে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)