প্রথম ধাক্কা, তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতির পদ হারানো। তার সামান্য পরেই উঠেছে বোলপুরের আইসি-কে ফোনে কু-কথা বলার অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে জেলা তৃণমূলের অন্দরে অনুব্রত মণ্ডলের (কেষ্ট) অনুগামীদের একটা বড় অংশ এখন ধীরে ধীরে বীরভূম জেলা সভাধিপতি কাজল শেখের দিকে ঝুঁকছেন বলে দাবি তৃণমূল সূত্রের। দলীয় রাজনীতিতে কাজল কেষ্টর বিপরীত শিবিরের বলে পরিচিত।
বোলপুরের কঙ্কালীতলার বনডাঙা তৃণমূল কার্যালয়ে ক’দিন আগেই অনুব্রত-অনুগামী সাঁইথিয়ার বনগ্রাম পঞ্চায়েতের ১১ সদস্য-সহ বেশ কয়েক জন তৃণমূল নেতা-কর্মী দেখা করেছেন কাজলের সঙ্গে। তাঁরা প্রকাশ্যে নেতৃত্বহীনতার অভিযোগ তুলে কাজলের শরণাপন্ন হয়েছেন। এ ব্যাপারে অনুব্রত, কাজল বা তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির কোনও সদস্যের মন্তব্য মেলেনি। বীরভূমের রাজনীতিতে কেষ্ট-কাজল সম্পর্ক নিয়ে চর্চা কম নয়।
তৃণমূল অন্দরের খবর, গত কয়েক মাসে দুই শিবিরের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে ব্লক বা বিধানসভা স্তরে। শুক্রবার বিকেলে আবার কেষ্ট-অনুগামী বলে পরিচিত, তৃণমূলের সাঁইথিয়া ব্লক সভাপতি সাবের আলি খান প্রকাশ্য সভায় দাবি করেছেন, কাজল শেখ সাঁইথিয়া ব্লকে ‘নোংরামো’ করছেন। অনুব্রত ছাড়া, কারও বীরভূম জেলার ১২টি বিধানসভা কেন্দ্রে জেতানোর ক্ষমতা নেই।
গরু পাচার মামলায় তিহাড় সংশোধনাগারে কাটিয়ে গত সেপ্টেম্বরে বীরভূমে ফেরার পরে, তৃণমূলের কোর কমিটিকে অনুব্রত ‘অপ্রাসঙ্গিক’ করে দিয়েছিলেন বলে বার বার অভিযোগ করছিলেন কমিটিরই একাধিক সদস্য। দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব এই কমিটির হাতে ছিল দু’বছরের বেশি। অনুব্রত ফেরার পরে, কমিটির বৈঠক কেন ডাকা হচ্ছে না, কেন কেষ্ট একক ভাবে কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, সে প্রশ্নে সরব হন কাজল। হস্তক্ষেপ করেন তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব। জেলা সভাপতির পদ তুলে কোর কমিটিকেই ফের দল চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কোর কমিটির প্রাথমিক পর্যায়ের সাত সদস্যের মধ্যে অনুব্রত, কাজল ছাড়াও, রয়েছেন কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, বোলপুরের নেতা সুদীপ্ত ঘোষ, লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ, সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী এবং রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে জেলার দুই সাংসদ শতাব্দী রায় ও অসিত মালকেও কোর কমিটিতে যুক্ত করা হয়েছে।কার সমর্থন কোন নেতার প্রতি, তা নিয়ে কোর কমিটির কোনও সদস্য মুখ খোলেননি। তবে সূত্রের দাবি, কাজল এখন জেলা তৃণমূলের চেয়ারপার্সন আশিস এবং অভিজিতের ‘অলিখিত’ সমর্থন পাচ্ছেন। তবে, অনুব্রতের সঙ্গে রয়েছেন বিকাশ ও সুদীপ্ত। মন্ত্রী চন্দ্রনাথ কিছুটা নিরপেক্ষতা বজায় রেখে চলছেন। দুই সাংসদও তা-ই।
দলের নেতাদের একাংশের দাবি, সংশোধনাগারে কাটানো সময়ে বীরভূম জেলা তৃণমূলে অনুব্রতের দাপট ও প্রভাব কমেছে। কেষ্ট অডিয়ো-বিতর্কে জড়ানোর পরে, দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি হয়েছে। বিশেষত, দলের মহিলা কর্মীদের একাংশ মনে করছেন, আইসি-র পরিবারের মহিলাদের যে ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে, তার পরে তাঁরা নারী হিসেবে সংশ্লিষ্ট নেতার পাশে থাকতে অস্বস্তি বোধ করছেন। ওই বিতর্কের পরে, দলের রাজ্য নেতৃত্ব যে ভাবে কেষ্টকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেছেন, তা-ও অনেকের চোখে পড়েছে। জেলা তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘কেষ্টদা বরাবর চেয়েছেন, জেলার সংগঠনে শেষ কথা বলবেন। কিন্তু কোর কমিটির উপরে আস্থা রেখেছে দল।’’ তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘১৪ জুন কলকাতায় একুশে জুলাইয়ের কেন্দ্রীয় প্রস্তুতি বৈঠক হবে। সেখানে বীরভূমের কোর কমিটির সদস্যেরা সকলেই থাকবেন। সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে সেখানে জেলা সংগঠন নিয়েও কথা হতে পারে।’’