• এগিয়ে আসা বর্ষায় স্বস্তি দিল মে’ ২৫
    এই সময় | ০৯ জুন ২০২৫
  • এই সময়: নির্ধারিত ১ জুনের পরিবর্তে এ বছর দেশে বর্ষা ঢুকেছে ২৪ মে। প্রাক্‌ বর্ষার বৃষ্টি শুরু হয় তারও অন্তত দশ দিন আগে। এ ভাবে এগিয়ে আসা বর্ষার সৌজন্যেই ৯২ বছরের মধ্যে শীতলতম মে মাস দেখল ভারত।

    মধ্যভারতের যে মালভূমি অঞ্চল মার্চ থেকেই তেতে ওঠা চাটুর মতো হতে থাকে, সেখানেও ২০২৫–এর মে মাসটা ১২৪ বছরের মধ্যে তৃতীয় শীতলতম। ১৯০১ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত সময়কালে আবহাওয়া সংক্রান্ত ডেটা এমনটাই জানাচ্ছে।

    এ বছরের আবহাওয়া নিয়ে গত বছরের শেষেই ভয়াবহ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন আবহবিদরা। ২০২৪ শেষ হতে তখন আর ঘণ্টা কয়েক বাকি। ততদিনে সে ‘মানব ইতিহাসের উষ্ণতম বছর’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

    আবহবিদদের উদ্বেগ বাড়িয়ে ’২৪-এর ১১টি মাসই ১৮৫০ সালের পরে পৃথিবীর উষ্ণতম মাসের তকমা পেয়েছে। আবহাওয়া বিজ্ঞানের রেকর্ড সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছিল ১৮৫০–এ। সে কারণেই ওয়েদার সংক্রান্ত যাবতীয় ডেটার রেকর্ড ওই সময় থেকে মেলে।

    গত বছরের শেষে বিজ্ঞানীরা হিসেব কষে দেখেছিলেন, আবহাওয়ার ‘স্বাভাবিক’ প্রকৃতি বজায় থাকলে মানব ইতিহাসের উষ্ণতম তিন বছরের মধ্যে জায়গা করে নেবে ২০২৫। হিসেব মিলিয়ে এ বছরের প্রথম ক’মাসের গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকলেও সদ্যসমাপ্ত মে মাস ভারতের জন্য অনেকখানি স্বস্তি নিয়ে এসেছে।

    গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির যে প্রবণতা গত ক’দশকে পরিবেশবিজ্ঞানী ও আবহবিদদের কপালের চিন্তার ভাঁজকে গভীরতর করছিল, সেই ধারা কি তবে বদলের মুখে? না, এত তাড়াতাড়ি এমন কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো ঠিক হবে না।

    মনে রাখতে হবে, বছর শুরুর পরে প্রথম তিন মাসের গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশিই ছিল। এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে অবশ্য বৃষ্টি পায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত। যার জেরে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ওই প্রবণতায় ছেদ পড়ে বছরের চতুর্থ মাসে পৌঁছে।

    কিন্তু বছর তার পঞ্চম মাসে পদার্পণের পরেই একেবারে ‘উলটপুরাণ’। পুনের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মিটিওরোলজি’ (আইআইটিএম)–র ডেটা অনুযায়ী, মধ্যভারতের মালভূমি অঞ্চলে মে-র গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৬.৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস — স্বাভাবিকের চেয়ে ২.৬৩ ডিগ্রি কম। ওই মাসে দক্ষিণ ভারতের উপদ্বীপ অঞ্চলের গড় তাপমাত্রাও ছিল নর্ম্যালের তুলনায় ২.২৫ ডিগ্রি কম (৩৪.১৩ ডিগ্রি), যা ৭০ বছরে (১৯৫৫ থেকে) ন্যূনতম।

    মৌসম ভবন জানাচ্ছে, মে–তে ভারতের নানা প্রান্তই ‘অস্বাভাবিক রকমের বজ্রবিদ্যুৎ সক্রিয়তা’ দেখেছে। মাসের ৩১ দিনের মধ্যে ২০ দিনও বজ্রবিদ্যুতের উপদ্রব রেকর্ড করা হয়েছে কোথাও কোথাও।

    পাশাপাশিই আছে অতি অল্প সময়ের মধ্যে তীব্র বৃষ্টির নজির। যেমন, মুম্বইয়ের নরিমান পয়েন্ট, কোলাবা, বাইকুল্লা এবং দো টাকি স্টেশনের মতো বেশ কিছু এলাকায় ২৪ ঘণ্টায় ২০০ মিমি থেকে ২৫০ মিমি পর্যন্ত বৃষ্টিও হয়েছে!

    এত কিছুর পরেও অবশ্য বলা যায় যে, স্বাভাবিকের তুলনায় শীতলতর মে, নির্ধারিত সময়ের অন্তত দশ দিন আগে বর্ষা এবং স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি বৃষ্টি আবহবিদ ও পরিবেশবিজ্ঞানীদের চিন্তামুক্ত করতে পারেনি।

    তাঁদের মতে, বিশ্বজুড়েই আবহাওয়ার ধরন দ্রুত বদলাচ্ছে এবং এই ঘটনাগুলো তারই ইঙ্গিত। আগামী দিনে আবহাওয়ার এমন ‘অস্বাভাবিক’ আচরণ আরও বেশি করে দেখা যাবে বলে মনে করছেন তাঁরা।

    তা ছাড়া এর নেপথ্যে মানুষের ভূমিকাও যথেষ্ট। ১৮৫০ থেকে — অর্থাৎ শিল্পবিপ্লবের পরেই প্রযুক্তি ব্যবহারের বৈপ্লবিক পরিবর্তন দেখেছে সারা পৃথিবী। উৎপাদন–ব্যবস্থায় যন্ত্রের প্রয়োগ দূষণকেও মাত্রাছাড়া জায়গায় নিয়ে গিয়েছে।

    প্রথম একশো বছরে এ নিয়ে সে ভাবে ভাবনাচিন্তা করেননি কেউ। ১৯৬০-এর দশক থেকে যখন বিষয়টি বিজ্ঞানীদের নজরে আসে, ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, দূষণে লাগাম পরানোর আনুষ্ঠানিক উদ্যোগের অভাব না থাকলেও তার বাস্তব প্রয়োগে কোথাও খামতি থাকছে বলেই হয়তো দূষণ বাড়ছে।

  • Link to this news (এই সময়)