নজরুল আর রবীন্দ্র-চেতনা মিশে গেল উৎসবের আধারে। মোমিনপুরের হুসেন শাহ পার্কে ইদুজ্জোহা বা বকরি ইদের নমাজ শেষে অনেকেই উচ্ছ্বসিত। বাহ, মহম্মদ নুরুদ্দিন সাহেব এ বার নমাজের আগের খুতবা (বক্তৃতা) খুব সুন্দর পড়লেন তো!
বকরি ইদের এই অনুষ্ঠানে সুহৃদ, বন্ধুর বাড়িতে মাংস, মিষ্টির আপ্যায়ন প্রতি বারই সামাজিক মিলনমেলার চেহারা নেয়। আবার একই সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলামেরকুরবানি কবিতাটির অভিঘাত ছাপ ফেলে বাঙালিদের অনেকের মনে। স্কুল পাঠ্যবইয়ের প্রকাশক, সুবক্তা নুরুদ্দিন তাঁরপ্রাক্-নমাজ বক্তৃতায় নজরুলের কবিতার অংশ আবৃত্তি করলেন। ‘ওরে হত্যা নয়,আজ সত্যাগ্রহ শক্তির উদ্বোধন’! বলিদানের মধ্যে ত্যাগের মর্মার্থ অনুভবে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করলেন তিনি। ‘নো ইয়র নেবার’ বলে একটি সামাজিক ঐক্য সংগঠনের ইদ-বার্তাতেও নজরুলেরউদ্ধৃতি— ‘মনের পশুকে করো জবাই, পশুরাও বাঁচে, বাঁচে সবাই’!ইদে প্রাক্-নমাজ বক্তৃতায় সমকালীন জাতীয়, আন্তর্জাতিক সামাজিক-রাজনৈতিক দিকের ছায়াপড়ে প্রতি বছর। এ বারও গাজ়া বা কাশ্মীরের হিংসার কথা উঠে এসেছে। পহেলগামে ধর্ম দেখে হিংসার নিন্দায় নুরুদ্দিন রবীন্দ্রনাথেরধর্মমোহ কবিতাটি মনে করালেন! ‘ধর্মের বেশে মোহ এসেযারে ধরে/ অন্ধ সে জন মরে আর শুধু মারে’!
কুরবানির আচার মানতে হয় বলে ইদুজ্জোহার নমাজ শুরুহয় একটু বেশি সকালে। নিয়ম অনুযায়ী, সঙ্গে থাকা পালিত পশুকে বলিদানই ইদেররীতি। কিন্তু কলকাতায় ছোট ফ্ল্যাট বা ভাড়াবাড়ির বাসিন্দাদের পক্ষে তা মেনে চলা সম্ভব হয় না। অনেকেই সদ্য কেনা পশু বলি দেন। আগে শহরের মুসলিম প্রধানমহল্লাগুলিতে কোথায় কে মহার্ঘ্য উট বা দুম্বা বলি দিলেন, তা নিয়ে চর্চা চলত। এ বার কলকাতায় তপসিয়ার দারাপাড়ায় উট বলির খবর মিলেছে। গুটিকয়েক ব্যক্তিই লক্ষলক্ষ টাকা খরচ করে দুম্বা, উট বলি দিতে পারেন। তবে ইদানীং অনেক জায়গাতেইপশুবলির সময়ে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, প্রকাশ্যে বলিদান এড়িয়ে চলা বাকুরবানির পরে পোশাক পাল্টে তার পরে রাস্তায় বেরোনোর প্রচার করতে দেখা গিয়েছে। ‘মেটিয়াবুরুজ এগেনস্ট হেট’ বলে একটি মঞ্চেরতরফে শেখ আলতাফউদ্দিন বলছিলেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন ওয়টস্যাপ গ্রুপে পরিচ্ছন্ন কুরবানি নিয়ে সচেতনতার প্রচার করছি।অনেকটা ফলও পাচ্ছি।’’ আজ, রবিবার ও কাল, সোমবার দুপুর পর্যন্ত ইদের কুরবানি চলার কথা।
নিউ টাউনে এনকেডিএ-র খেলার মাঠেও স্থানীয় সেকুলারফোরাম আয়োজিত নমাজের আসরে পুরুষ ও মহিলারা পাশাপাশি আলাদা জামাতে নমাজ পড়েন। স্থানীয় অমুসলিম প্রতিবেশীরাও ছিলেন স্বেচ্ছাসেবীর ভূমিকায়।নিউ টাউন এলাকায় মসজিদ নেই। অথচ, স্থানীয় বাসিন্দা ও অফিসকর্মী মিলিয়ে বহু মুসলিম রয়েছেন। সেকুলার ফোরামের আর্জি, শুক্রবারের নমাজ পড়ার একটি নির্দিষ্টজায়গা পেলে সকলেরই সুবিধা হয়।