‘অপারেশন সিঁদুরের নামোল্লেখ নেই বিধানসভার প্রস্তাবে’! আসন্ন বাদল অধিবেশন উত্তপ্ত হতে পারে বিজেপির বিক্ষোভে
আনন্দবাজার | ০৯ জুন ২০২৫
সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে বিধানসভার বাদল অধিবেশন। সেই অধিবেশনের শুরুতেই মিলেছে উত্তাপের ইঙ্গিত।
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানায় ২২ জন ভারতীয় পর্যটকের মৃত্যু এবং তার জবাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রত্যাঘাতমূলক অভিযানের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় একটি প্রস্তাব পেশ হতে চলেছে। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এই প্রস্তাব আনতে চলেছে বিধানসভার সচিবালয়। যদিও এই প্রস্তাব পেশ হওয়ার আগেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। কারণ, এই প্রস্তাবে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর কোনও উল্লেখ নেই। ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয়েছিল, পহেলগাঁওয়ে ভারতীয় পর্যটকদের উপর হামলার প্রত্যাঘাতে সেনা ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি জবাবি অভিযান চালায়। সেনাবাহিনীর এই পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা হয়েছে দেশ জুড়ে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় আলোচনার প্রস্তাবনায় সেনার সেই অভিযান তথা ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর নাম অনুপস্থিত থাকায় ক্ষোভে ফুঁসছে বিজেপি পরিষদীয় দল।
বিজেপির দাবি, সেনাবাহিনী দেশের গর্ব এবং তাদের প্রতিক্রিয়া ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামেই চিহ্নিত হয়েছে। তাই এই নাম অনুপস্থিত থাকা মানে সেনার বীরত্বকে খাটো করা। ইতিমধ্যেই বিজেপি পরিষদীয় দল প্রস্তাবের কপি হাতে পেয়েছে এবং তাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের অনুপস্থিতি তাদের চোখে পড়েছে। এই বিষয়ে বিজেপি পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক শঙ্কর ঘোষ বলেন, “এ বিষয়ে যা বলার তা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলবেন। তবে এটুকু বলা যায়, যাঁরা এই প্রস্তাব লিখেছেন, তাঁদের ভারতীয় সেনাবাহিনী সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান নেই।”
বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে, মঙ্গলবার বিধানসভার আলোচনায় এই বিষয়টি জোরালো ভাবে তুলে ধরবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি চাইবেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’কে প্রস্তাবে সংযোজন করা হোক এবং সেনার বীরত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।
এই প্রসঙ্গে শাসকদল তৃণমূলের পক্ষ থেকে কেউ মুখ খুলতে নারাজ। যেহেতু প্রস্তাবটি স্পিকারের দফতর থেকে এসেছে, তাই দলের তরফ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক বিধায়ক বলেন, “স্পিকারের প্রস্তাবে দলীয় মন্তব্য করা ঠিক নয়।”
স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপি পরিষদীয় দলের কথায় তো আর বিধানসভার অধিবেশন চলবে না। আমি যে প্রস্তাব এনেছি, সেই প্রস্তাবের ভিত্তিতেই আলোচনা হবে। বিজেপি পরিষদীয় দলের যা বক্তব্য, তা তারা ওই অধিবেশনেই রাখতে পারে।’’
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রসঙ্গে বিতর্ক রাজ্য রাজনীতির মঞ্চে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সেনাবাহিনীর জবাবি পদক্ষেপ নিয়ে যেখানে গোটা দেশ ঐক্যবদ্ধ, সেখানে একটি রাজ্য বিধানসভার প্রস্তাবে এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি অভিযানের নাম না থাকা নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক বিতর্কের সৃষ্টি করবে বলেই মত বিজেপি বিধায়কদের। তৃণমূল শাসিত রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনী ভূমিকাকে প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে কি না, এই বিষয়ে বিজেপি আগামী দিনে রাজনীতি করতে পারে বলেও মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা। সব মিলিয়ে বিধানসভার মঙ্গলবারের অধিবেশন ঘিরে উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে।