• ইডি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ় করে রাখায় বন্ধ বেতন ও পেনশন, বাধ্য হয়ে বিধানসভায় নতুন অ্যাকাউন্ট খুললেন মানিক
    আনন্দবাজার | ০৯ জুন ২০২৫
  • পলাশীপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য শেষ পর্যন্ত নতুন করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে বাধ্য হলেন। কারণ, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডি-র হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর পুরনো সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ় করে দেওয়া হয়েছে। ফলে তিনি বিধানসভা থেকে বেতন পাচ্ছিলেন না, এমনকি প্রাক্তন শিক্ষক হিসাবে তাঁর পেনশন পাওয়ার পথও বন্ধ হয়ে যায়। জানা গিয়েছে, মানিক মে মাসে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় অবস্থিত স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার শাখায় নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। বিধানসভায় বেতন পাওয়ার জন্য এই অ্যাকাউন্ট ব্যবহৃত হচ্ছে। জুন মাসের শুরুতেই সেই নতুন অ্যাকাউন্টে তাঁর বেতন জমা পড়েছে। তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে এখনও কিছুই প্রমাণ করতে পারেনি ইডি। অথচ আমার ব্যক্তিগত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি ফ্রিজ় করে রাখা হয়েছে। তার জেরে আমি চরম আর্থিক সমস্যায় পড়েছি। বেতন বন্ধ, পেনশন বন্ধ— এ ভাবে আর কত দিন চলবে?”

    মানিক জেল থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর বিধানসভার কার্যকলাপেও সক্রিয় ভাবে অংশ নিচ্ছেন। তিনি বিধানসভার বিভিন্ন কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থেকেছেন, এমনকি বাজেট অধিবেশনেও অংশ নিয়েছেন। কিন্তু বেতন পাচ্ছিলেন না শুধুমাত্র ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ় হয়ে থাকার কারণে। ইডি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ় করে রাখায় বেতন বা পেনশন তাতে দেওয়া যাচ্ছে না। মানিকের দাবি, ইডি যে অ্যাকাউন্টগুলি ফ্রিজ় করেছে, তার মধ্যে রয়েছে বিধায়ক হিসেবে বেতন পাওয়ার অ্যাকাউন্ট এবং অধ্যাপক হিসাবে পেনশন প্রাপ্তির অ্যাকাউন্ট। এ সব অ্যাকাউন্ট ফের চালু করতে গেলে তাঁকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। আবেদন করতে হবে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থার কাছে এবং আদালতেরও অনুমতি প্রয়োজন হতে পারে। সেই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ এবং অনিশ্চিত। ফলে যত দিন না পুরনো অ্যাকাউন্টগুলি পুনরায় সচল হচ্ছে, তত দিন বিকল্প ব্যবস্থা করা ছাড়া তাঁর কোনও উপায় ছিল না।

    এই পরিস্থিতিতে তিনি বিধানসভার সচিবালয়ে একটি লিখিত আবেদন করেন, যাতে নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানে বেতন জমা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। বিধানসভার পক্ষ থেকে সেই আবেদন মঞ্জুর হওয়ায় মে মাসে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি পান তিনি। জুনের শুরুতে সেই অ্যাকাউন্টে বেতন আসায় কিছুটা স্বস্তিতে মানিক। এই প্রসঙ্গে রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, ইডির পদক্ষেপের জেরে এমনিতে চাপের মুখে থাকা মানিক আর্থিক ভাবে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাঁকে এখনও পর্যন্ত আদালত দোষী সাব্যস্ত করেনি, অথচ তাঁর আর্থিক লেনদেন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়া এক ধরনের অঘোষিত শাস্তি বলেই মনে করছেন অনেকে। বিষয়টি নিয়ে মানিক বলেন, “আমি আইনি পথে লড়ছি। নতুন করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলেছি শুধু বেঁচে থাকার জন্য। এটা আমার সাংবিধানিক অধিকার।”

    প্রসঙ্গত, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে ২০২২ সালের ১১ অক্টোবর মানিককে গ্রেফতার করে ইডি। ২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তাঁর জামিন মঞ্জুর হলে তিনি মুক্তি পান।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)