• অর্থ কমিশনের টাকা খরচে পিছিয়ে কুমারগঞ্জ পঞ্চায়েত
    আনন্দবাজার | ০৯ জুন ২০২৫
  • কোনও পঞ্চায়েতে অঞ্চল নেতাদের খবরদারির অভিযোগ, কোথাও আবার প্রকল্প রচনা ও তা রূপায়ণের জায়গা বাছাই নিয়ে সদস্যদের মধ্যে বনিবনার অভাব— সব মিলিয়ে হুগলি জেলার বেশ কিছু পঞ্চায়েত কেন্দ্রীয় পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা খরচের ক্ষেত্রে পিছিয়ে। জেলার ২০৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে সব থেকে খারাপ অবস্থা গোঘাট-২ ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত কুমারগঞ্জ পঞ্চায়েতের।

    এই পঞ্চায়েতের ২০২৪-২০২৫ অর্থবর্ষের দ্বিতীয় কিস্তির টাকায় প্রায় হাতই পড়েনি। সোমবার পর্যন্ত জেলার সব পঞ্চায়েত মিলিয়ে খরচের গড় যেখানে ৫৫.৩৪ শতাংশ, সেখানে কুমারগঞ্জ পঞ্চায়েতে গড় ৪.৯৪ শতাংশ বলে জেলার হিসাব। অথচ, ওই পঞ্চায়েতে দ্বিতীয় কিস্তির টায়েড ও আনটায়েড মিলে প্রাপ্ত তহবিল ছিল ৩৮ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা।

    পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সাত মাস সাধারণ সভা ডাকা হলেও ১৪ জন সদস্যের ১১ জনই গরহাজির থেকেছেন। মোট সদস্যের তিন ভাগের এক ভাগ সদস্য হাজির হলেই সভা করা যায়। প্রতি মাসে সাধারণ সভা থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার সদস্যদের সুপারিশ মতো গ্রাম উন্নয়নের ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত এবং পরিকল্পনা রচনা করে উন্নয়ন হয়।

    টাকা খরচের ক্ষেত্রে নিজেদের দূরবস্থার কথা স্বীকার করে পঞ্চায়েত প্রধান আল্পনা রায় বলেন, “সাধারণ সভাগুলিতে সদস্যেরা হাজির না হওয়াতেই পরিকল্পনা রচনা করা বা তা অনুমোদন হচ্ছে না। আগামী বৃস্পতিবার ফের সাধারণ সভা ডাকা হয়েছে। আশা করি, এলাকার উন্নয়নের কথা ভেবে সকলেই আসবেন।’’

    সাধারণ সভা দীর্ঘদিন গরহাজির থাকা দলেরই উপপ্রধান বিশ্বজিৎ রায় বলেন, “আলোচনা হয়েছে। নিজের অপমান-হেনস্থা ভুলে গ্রামোন্নয়নের কথা ভেবে সাধারণ সভায় যাব সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” তবে সদস্য তথা পঞ্চায়েতের কৃষি সঞ্চালক কালীপদ খাঁ-র সরাসরি অভিযোগ, “পঞ্চায়েতের কাজে দলের অঞ্চল নেতার খবরদারি ও প্রধানের দুর্ব্যবহারে বীতশ্রদ্ধ হয়েই অফিস যাওয়া বন্ধ করেছি। দল বা প্রশাসন হস্তক্ষেপ করে পঞ্চায়েতে সুষ্ঠু পরিবেশ ফেরালেই সবাই হাজির থাকবেন।”

    খবরদারি বা অপমানের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান। দলের অঞ্চল সভাপতি সদরুদ্দোজা ওরফে রাহুল বলেন, “পঞ্চায়েতের কোনও ব্যাপারেই নাক গলাতে যাইনি।” তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতটির অচলাবস্থা নিয়ে দলের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি রামেন্দু সিংহরায় বলেন, “অভিযোগ পাইনি। এখন জানলাম। সব পক্ষের সঙ্গে বসে সমস্যা মিটিয়ে দেব।”

    এ দিকে, এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, অবিলম্বে পঞ্চায়েতকে কাজে ফেরাতে ব্লক ও জেলা প্রশাসনকে উদ্যোগী নিতে হবে। তাঁদের অভিযোগ, বর্ষার আগে রাস্তা সংস্কার, প্রয়োজনীয় নিকাশির কাজ একেবারেই হয়নি।

    যুগ্ম বিডিও কুন্তলকুমার মণ্ডল বলেন, “পঞ্চায়েতটির অচলাবস্থা কাটাবার চেষ্টা চলছে। আশা করি, শীঘ্রই সমস্যা মিটবে।’’ আর অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) অনুজপ্রতাপ সিংহ বলেন, “সব পঞ্চায়েতই যাতে যথাযথ ভাবে তহবলির সদ্ব্যবহার করে, সে জন্য ধারাবাহিক ভাবে বৈঠককরছি আমরা।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)