আগামী নির্বাচনে জেলার হেরে যাওয়া বিধানসভাগুলি পুনরুদ্ধার করতে হবে। সেই লক্ষ্যে ওই সব এলাকায় সংগঠন গোছানোর কাজকে ‘পাখির চোখ’ করছেন তৃণমূলের সদ্য নিযুক্ত জেলা সভাপতি রাজীবলোচন সরেন। ইতিমধ্যে জয়পুর, রঘুনাথপুর ও পাড়া বিধানসভায় কর্মিসভা করেছেন তিনি। কিন্তু রঘুনাথপুর বিধানসভার দু’ব্লকের কর্মিসভায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে দলীয় নেতৃত্বর একাংশের অনুপস্থিতি চোখে পড়েছে। ঘটনায় ফের দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ে চর্চা চললেও তাতে আমল দিতে নারাজ রাজীবলোচন। তাঁর দাবি, “দলের শীর্ষ নেতৃত্বর নির্দেশেই গত বিধানসভায় জেলায় যে সব আসনে আমরা হেরেছি, সেখানে সংগঠনকে গোছাতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পরের ধাপে অন্য বিধানসভাগুলিতেও কর্মিসভা হবে।”
জেলার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মত, পুরুলিয়ায় শাসক দলের সংগঠন বেশ মজবুত। তবে জয়ে বাধা হচ্ছে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বই। গত বিধানসভা ভোটে রঘুনাথপুর, পাড়া, কাশীপুর, পুরুলিয়া ও বলরামপুর বিধানসভায় প্রার্থীদের পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। দলের অন্দরেও কান পাতলেও শোনা যাচ্ছে একই কথা। দলের ময়না তদন্তেও উঠে এসেছে, দলের একাংশের কলকাঠিতে বলরামপুরে সামান্য ভোটে হারতে হয় প্রাক্তন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোকে। লোকসভা ভোটে যদিও দেখা গিয়েছে ভিন্ন ছবি। দলের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নামার কারণেই বিজেপির দখলে থাকা রঘুনাথপুর, কাশীপুর, বলরামপুর ও জয়পুর বিধানসভায় এগিয়ে গিয়েছে তৃণমূল। দলীয় ঐক্যের গুরুত্ব অনুবাধন করেই সভাগুলিতে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে রাজীবলোচনকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “অতীত ভুলে যান। মনে রাখুন, দলে আমি নই আমরা। আমার নয় আমাদের। কোনও নেতার অনুগামী নয়। দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও আমাদের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের প্রতীক অনুসরণ করে সকলকে চলতে হবে।”
ঘটনা হল, শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বর্তমানে নবীন-প্রবীণের মেলবন্ধন ঘটানোয় বিশেষ নজর দিচ্ছে। সেই পথে হেঁটে নতুন জেলা সভাপতিও চাইছেন দলের পুরনো কর্মীদের যথাযোগ্য সম্মান দিয়ে ‘সক্রিয়’ করতে। তিনি বলেন, “প্রতি বিধানসভায় বেশ কিছু কর্মী আছেন, যাঁরা একনিষ্ঠ ভাবে দলটা করেন। কিন্তু প্রাপ্য সম্মান পাননি। বিধানসভাগুলিতে ফিরে পেতে দলের ওই পুরনো কর্মীদের সঙ্গে নতুনদের মেলবন্ধন ঘটানো একান্তই জরুরি।”
পাশাপাশি, বিধানসভাগুলিতে নেতৃত্বের একাংশ দলকে ব্যক্তিগত স্বর্থে ব্যবহার করছেন বলেও নজরে আসছে বলে দাবি রাজীবলোচনের। তাঁর বক্তব্য, “এ সব আর বরদাস্ত করা হবে না। যাঁরা দলকে ব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করছেন, তাঁদের চিহ্নিত করা শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে দল কড়া ব্যবস্থা নেবে।” তবে বিজেপির নেতা বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর কটাক্ষ, “তৃণমূলে এখন শুধু কাটমানি খাওয়া লোকজনেরই ভিড়। সকলে দলকে ব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি করেছেন। তাঁদের খুঁজতে গেলে ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে।”