স্কুলে বড় মাঠ নেই, নেই উঠোনও। তাতে বিদ্যালয়ের সবুজায়নে বাধা পড়েনি। বাগান গড়তে বেছে নেওয়া হয়েছে স্কুলের ছাদকে। সেখানেই ফলছে ড্রাগন ফল, মালটা, আঙুর, কলা, সবেদার মতো নানা রকম পুষ্টিকর মরসুমি ফল। আর এই বাগানেই হাতে-কলমে গাছের পরিচর্যার কাজ শিখছে পড়ুয়ারা। ভাঙড় ১ ব্লকের ভাঙড় বালিকা বিদ্যালয়ের (উচ্চ মাধ্যমিক) এই উদ্যোগে খুশি ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকেরা।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ছাদে রোপণ করা হয়েছে প্রায় ১৫০টি ড্রাগন ফলের গাছ, ১০টি মালটা, চারটি আঙুর, দু’টি সবেদা ও কয়েকটি কলা গাছ। সব গাছেরই পরিচর্যা করা হচ্ছে জৈব পদ্ধতিতে। এই উদ্যোগের নেপথ্যে রয়েছেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা নুপূর শিকদার, মানসী প্রধান মাইতি, ফরিদা খাতুন-সহ বাকিরা। তাঁরা জানান সকলে মিলে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করে গাছগুলি লাগিয়েছেন। পরিচর্যার দায়িত্বে রয়েছেন শিক্ষিকা ও কন্যাশ্রী ক্লাবের ছাত্রীরা। এত দিন স্কুলে গরমের ছুটি চলছিল। তবে তার মধ্যেও স্কুলে এসে ছাদ বাগান দেখভাল করছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা-সহ অন্যেরা।
নুপূর জানান, এই বাগানে ছাত্রীরা হাতে-কলমে শিখছে কী ভাবে জৈব সার বানাতে হয়, কেমন করে বাড়ানো যায় ফলন। মিড-ডে মিলের অব্যবহৃত খাবার, আনাজের খোসা ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে জৈব সার। সেই সারেই বেড়ে উঠছে বাগানের গাছ। শুধু তাই নয়, প্রতিটি ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কেও জানানো হচ্ছে ছাত্রীদের। তাই শবনম পারভীন ও সুদীপা অধিকারীরা শিখেছে ড্রাগন ফলে থাকা ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আঙুর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, ভাল রাখে হার্ট, কলা তাৎক্ষণিক শক্তি জোগাতে দারুণ কার্যকর।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘‘ছাত্রীদের স্বাবলম্বী করতেই এই উদ্যোগ। পড়াশোনার বাইরে গিয়ে ওরা হাতে-কলমে গাছের পরিচর্যা শিখছে। পাশাপাশি, পড়ুয়াদের পুষ্টির কথা মাথায় রেখে ছাদের গাছের ফল তুলে দেওয়া হচ্ছে ওদের পাতে।’’
স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি আজান আলি বলেন, ‘‘আমরা নিজেদের মতো করে চেষ্টা করছি বাগানটাকে আরও বাড়িয়ে তোলার। তবে কৃষি দফতর জৈব সার, চারা গাছ সরবরাহ করে সহযোগিতা করলে ভাল হয়।’’ জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ বাহারুল ইসলাম জানান, ‘‘স্কুল লিখিত ভাবে আবেদন করলে কৃষি দফতর থেকে সবরকম সাহায্য করা হবে।’’
স্কুল পরিদর্শক (এসআই) সৌমিক সরকার বলেন, ‘‘এই স্কুল ব্লকের মধ্যে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে যা অন্য স্কুলগুলিকেও অনুপ্রাণিত করবে। বিদ্যালয়ের মধ্যেই কর্মমুখী শিক্ষার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। ’’