এক দিকে প্রবল গোষ্ঠী কোন্দল, অন্য দিকে পুরসভা বাদে বিগত নির্বাচনগুলিতে ভরাডুবি। এই পরিস্থিতিতে দলের সাংগঠনিক ‘নিষ্ক্রিয়তা’র অভিযোগ তুলে সরব হচ্ছেন তৃণমূলের নিচুতলার নেতাকর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হতে গেলে নেতৃত্বের যে পরিমাণ সক্রিয়তা প্রয়োজন, গত লোকসভা ভোটের পর তার ছিটেফোঁটাও লক্ষ করা যাচ্ছে না। ফলে বিজেপি কার্যত ‘ওয়াকওভার’ পেয়ে যেতে পারে।
১৯৯৮ সালে বিজেপি ও তৃণমূলের জোটপ্রার্থী হিসাবে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছিলেন সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় ওরফে জুলুবাবু। তিনি পরাজিত হলেও কৃষ্ণনগর থেকে এগিয়ে ছিলেন। পরের বছর তিনি তৃণমূল-বিজেপির জোটপ্রার্থী হিসাবে জয়ী হন। সে বারও কৃষ্ণনগর শহর ও আশেপাশের পঞ্চায়েত এলাকা থেকে বিপুল ভোটে তিনি এগিয়ে ছিলেন। ২০০৪, ২০০৯ ও ২০১৪ সালে তিনি বিজেপি প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে তৃতীয় স্থানে থাকেন। কিন্তু সেই ভরাডুবির মধ্যেও কৃষ্ণনগর শহর ও সংলগ্ন ব্লক এলাকায় তিনি এগিয়ে ছিলেন। ২০১৯ সালে কল্যাণ চৌবে কৃষ্ণনগর কেন্দ্র বিজেপি প্রার্থী হয়ে প্রায় ৬৩ হাজার ভোটে পরাজিত হন। কিন্তু কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রচুর ভোটে এগিয়ে ছিলেন। গত লোকসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায় প্রায় ৫৭ হাজার ভোটে পরাজিত হন। কিন্তু এই বিধানসভা কেন্দ্রে প্রায় ৫৪ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন। গত বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে প্রায় ৩৩ হাজার ভোটে জিতেছিলেন মুকুল রায়।
বছর ঘুরলেই আর একটি বিধানসভা নির্বাচন। এমনিতেই কৃষ্ণনগর পুরসভায় তৃণমূলের কোন্দল নিয়ে বিরক্ত শহরবাসী। তা মেটানোর জন্য নেতৃত্বের তরফে কড়া পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। শহরের সাংগঠনিক অবস্থায়ও প্রায় একই রকম। দলীয় কর্মীদের একাংশের আক্ষেপ, রাজ্য থেকে যে সমস্ত কর্মসূচি দেওয়া হয় তার বাইরে শহরের সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য কোনও নিজস্ব কর্মসূচির বা বুথস্তরে কর্মীদের নিয়ে বৈঠক হয় না। লোকসভা ভোটের পর শহরে কর্মী ও পুরপ্রতিনিধিদের নিয়েও তেমন কোনও বৈঠক হয়নি। জেলা নেতৃত্বের হেলদোল নেই বলে অভিযোগ কর্মীদেরই। যদিও তৃণমূলের কৃষ্ণনগর শহর সভাপতি প্রদীপ ওরফে মলয় দত্তের দাবি, “এই অভিযোগ সঠিক নয়। কারণ আমরা পুরপ্রতিধি ও ওয়ার্ড সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভানেত্রী নিশ্চয়ই চিন্তাভাবনা করছেন।”
কৃষ্ণনগর শহরের পাশের পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতই বর্তমানে বিজেপির দখলে। গত বিধানসভা ভোটে প্রায় ১৭ হাজার ও লোকসভা ভোটে প্রায় ২৩ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। ব্লকেও দলের কোন্দল চরমে। কৃষ্ণনগর ১ উত্তর সাংগঠনিক ব্লক সভাপতি দেবব্রত ঘোষের দাবি, “দলের কর্মসূচির বাইরেও আমি নিজের মতো কর্মসূচি নিচ্ছি। পঞ্চায়েত ধরে ধরে কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করছি। তবে লোকসভা ভোটের পর জেলা নেতৃত্বের তরফে তেমন কোনও নির্দেশ পাইনি।”
প্রায় ৯০ শতাংশ হিন্দু-প্রধান এই কেন্দ্রে বিজেপি স্বাভাবিক ভাবেই এগিয়ে আছে বলে মনে করছেন অনেকে। তবে তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা চেয়ারম্যান রুকবানুর রহমানের দাবি, “এই কেন্দ্রটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সেই মতো পরিকল্পনাও করা হচ্ছে। মানুষ ভুল বুঝতে পারছেন। এ বার আমাদের জয় নিশ্চিত।”