শতাব্দী-প্রাচীন গ্রন্থাগারে কয়েকশো বছরের দুর্মূল্য পুঁথিসম্পদ। হাজার বছরের প্রাচীনও হতে পারে! লালশালুতে মোড়া তাল কিংবা ভূর্জপত্রে লেখা ঐতিহাসিক পুঁথিপত্র, দুষ্প্রাপ্য, দুর্লভ সব গ্রন্থ আর কত দিন সংরক্ষণ করে রাখা যাবে, এই নিয়ে আক্ষেপ বা দুর্ভাবনার এক প্রকার অবসান ঘটেছে আপাতত। সৌজন্যে, ডিজিটাল মাধ্যমে সংরক্ষণ বা ডিজটাইজ়েশন।
প্রায় সোয়াশো বছর ছুঁতে চলা নবদ্বীপ সাধারণ গ্রন্থাগারের যাবতীয় পুঁথি এবং দুষ্প্রাপ্য বইয়ের ‘ডিজিটাইজ়েশন’ শুরু হয়েছে সম্প্রতি। কলকাতার ‘দ্য সেন্টার ফর স্টাডিজ় ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস’-এর তত্ত্বাবধানে আগামী ছ’মাস ধরে ওই কাজ চলবে।
‘হেরিটেজ’ শহর নবদ্বীপের ওই গ্রন্থাগার বস্তুত গোটা দেশের সারস্বত সমাজের কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা, ১৯১১ সালে সভাপতি হন স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। গ্রন্থাগার ভবনটিও প্রাচীন নবদ্বীপের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কিংবদন্তী নৈয়ায়িক ব্রজনাথ বিদ্যারত্নের ভাই হরিদাস শিরোমণির টোলবাড়ি কিনে ১৯১৫ সালে ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। গ্রন্থাগারের সংগ্রহে রয়েছে ১৭ হাজার বই। তবে সবচেয়ে সমৃদ্ধ পুঁথি বিভাগ। ‘নবদ্বীপের সমাজ ও সংস্কৃতি’ গ্রন্থে লেখক প্রদ্যোতকুমার গোস্বামী লিখেছেন, “এখানে তালপাতার পুঁথি আছে ১৮টি, ভূর্জপত্রের পুঁথি আছে ৪টি, তুলোট কাগজে লেখা পুঁথি আছে ১৩৪৬টি।”
এ হেন গ্রন্থভান্ডার নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তিত ছিলেন কর্তৃপক্ষ। পরিচালন সমিতির সম্পাদক নিশীথকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই বিশাল সম্পদ আগামী দিনে কী ভাবে রক্ষা করা যায়, তা নিয়ে আমরা সকলেই উদ্বিগ্ন ছিলাম। নদিয়ার জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিককের সঙ্গে একাধিক বার আলোচনা হয়েছে। তাঁরই চেষ্টায় পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাইজ়েশনের কাজ শুরু করা সম্ভব হল।”নদিয়ার গ্রন্থাগ্রার আধিকারক প্রবোধ মাহাতো বলেন, “নদিয়া জেলায় শান্তিপুর ও কৃষ্ণনগরে এই কাজ হয়েছে। সম্প্রতি কৃষ্ণনগর সাধারণ গ্রন্থাগারে ‘সেন্টার ফর স্টাডিজ় ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস’ এই ধরনের কাজ করেছে। আমরা তাদের কাছে নবদ্বীপের বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। কেননা নবদ্বীপের মতো এত পরিমাণ এবং সমৃদ্ধ সংগ্রহ খুব কমই আছে। নবদ্বীপ সাধারণ গ্রন্থাগার এবং ‘সেন্টার’-এর মধ্যে একটি মউ সাক্ষরিত হয়েছে। সেই অনুযায়ী কাজ শুরু হল।”
আর, ‘সেন্টার ফর স্টাডিজ় ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস’-এর ডকুমেন্টেশন অফিসার অভিজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের সংস্থা কেন্দ্র এবং রাজ্যের যৌথ সহায়তায় চলে। কিন্তু এই ধরনের কাজের জন্য আমরা দেশ-বিদেশের নানা বিশ্ববিদ্যালয় বা ফাউন্ডেশনের অর্থানুকূল্য পাই। এই কাজগুলিকে বলা হয় এনডেনজারড আর্কাইভস প্রোগ্রাম। যাবতীয় পুঁথি বা গ্রন্থ ডিজিটাইজ়েশন করে পঞ্জীকরণ হবে। শেষে যাবতীয় তথ্য ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এবং সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।”