• স্ক্যানে অযথা দেরি, মেট্রোয় বিভ্রাট বাড়াচ্ছে কিউআর কোডের টিকিট
    আনন্দবাজার | ০৯ জুন ২০২৫
  • প্লাস্টিকের টোকেন খোয়া যাওয়ার আর্থিক ক্ষতি এড়াতে মেট্রো সফরে কিউআর কোড যুক্ত কাগজের টিকিট ব্যবহারে সম্প্রতি জোর বাড়িয়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এই ব্যবস্থায় মেট্রোর আর্থিক ক্ষতি কমলেও যাত্রী ভোগান্তি অনেকাংশে বেড়েছে বলে অভিযোগ। বিশেষত, ভিড়ের সময়ে কিউআর কোড যুক্ত কাগজের টিকিট ঠিক মতো স্ক্যান করতে না পারায় প্ল্যাটফর্মে ঢোকা এবং বেরোনোর ক্ষেত্রে অহেতুক দেরি হচ্ছে। সফরের শুরুতে টিকিট স্ক্যানে দেরির কারণে ট্রেন যেমন হাতছাড়া হচ্ছে, তেমনই ব্যস্ত স্টেশনগুলিতে সফর শেষে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে স্মার্ট গেটের সামনে যাত্রীদের ভিড় জমছে।

    গত কয়েক বছরে উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোর একাধিক স্টেশনে যাত্রীদের সুবিধায় চলমান সিঁড়ি বসিয়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। বিপুল সংখ্যক যাত্রী ওই চলমান সিঁড়ি ব্যবহার করায় স্মার্ট গেটের সামনে হঠাৎ ভিড় জমে যাচ্ছে। কিউআর কোড যুক্ত কাগজের টিকিট স্ক্যান করে স্মার্ট গেট খোলার প্রক্রিয়া দ্রুত না হওয়ায়তার সামনে একসঙ্গে এত যাত্রী পৌঁছে যাচ্ছেন যে, সেই ভিড় চলমান সিঁড়ি পর্যন্ত চলে যাচ্ছে।

    একই ভাবে, যাত্রীদের বেরিয়ে আসার পথেও কিউআর কোডের টিকিটে স্মার্ট গেট দেরিতে খোলার কারণে মাঝেমধ্যেই ভিড় চলমান সিঁড়ি ছুঁয়ে ফেলছে। এই অবস্থায় পিছনে চলমান সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসাযাত্রীদের স্রোত আচমকা গেটের সামনে থমকে থাকা ভিড়ে বাধা পেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে দুর্ঘটনার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।

    উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোর রবীন্দ্র সরোবর, রবীন্দ্র সদন, ময়দান, এসপ্লানেড স্টেশনের উত্তর প্রান্ত, চাঁদনি চক স্টেশনের দক্ষিণ দিক,মহাত্মা গান্ধী রোড-সহ একাধিক স্টেশনে এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ওই সব স্টেশনে স্মার্ট গেট সংলগ্ন অংশে তাঁদের ঢোকা-বেরোনোর রাস্তা সঙ্কীর্ণ হচ্ছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ। চার দশকের পুরনো ওই সব মেট্রো স্টেশনে ভিড় বাড়ছে নানা সময়ে। সেখানে চালু পরিকাঠামো অপ্রতুল হওয়ার পাশাপাশি কিউআর কোড যুক্ত কাগজের টিকিট স্ক্যানেরপ্রক্রিয়া পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে।

    ভিড় বাড়লে মেট্রোর কর্মীরা তাঁদের বিশেষ কার্ড ব্যবহার করে গেট খুলে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন। এ দিকে, মেট্রোয় কর্মীর সংখ্যা কমছে।ফলে সমস্যা বাড়ছে সেখানেও। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর শিয়ালদহ, এসপ্লানেড, হাওড়া, সেক্টর ফাইভ-এর মতো স্টেশনেও কাগজের কিউআর কোডের টিকিট যাত্রীদের ঢোকা এবং বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়া মন্থর করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ।

    যে স্মার্ট গেট দিয়ে মিনিটে ৪৫ জন যাত্রী বেরোতে পারেন বলে কর্তারা দাবি করে থাকেন, বাস্তবে সেখান দিয়ে মিনিটে আট থেকে দশ জন যাত্রী বেরোতে পারছেন। তা ছাড়া সফর শেষে যাত্রীদের ফেলে দেওয়া ওই কাগজের টিকিটে স্টেশনের পরিবেশ নোংরা হচ্ছে বলেও অভিযোগ। যাত্রীদের আরও অভিযোগ, মেট্রোয় টোকেন দেওয়ার ব্যবস্থা এখনও চালু থাকলেও অধিকাংশকে কিউআর কোড যুক্ত কাগজের টিকিটই দেওয়া হচ্ছে।

    কলকাতা মেট্রোর প্রগতিশীল কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি শুভাশিস সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘সারা দেশ যখন কাগজবিহীন অফিসের দিকে এগোচ্ছে, তখন কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষ পিছন দিকে হাঁটছেন। সার্বিক পরিষেবা উন্নত করতে শুধু যন্ত্র নয়, কর্মীও দরকার। এটা ওঁরা বুঝতে চাইছেন না। আমরা আরও কর্মী নিয়োগ করার দাবি জানিয়েছি।’’

    মেট্রো কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, তাঁরা স্মার্ট কার্ড ব্যবহারে যাত্রীদের উৎসাহিত করছেন। মোবাইলের মাধ্যমে টিকিট কাটতেও তাঁদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য কাগজের ব্যবহার কমিয়ে আনা। পাশাপাশি মেট্রো স্টেশনগুলিতে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি চলছে। যাতে ভিড় হতে দেখলেই কর্মীরা দ্রুত পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেন।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)