শাহজাদ হোসেন, ফরাক্কা: মাত্র ছ’মাস বয়সেই মাতৃহারা হন। হারাতে হয়েছে বাবাকেও। মামার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা। জীবনে সংগ্রাম বহু। তবে সেসবকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জীবনে সাফল্য অর্জন করেছেন মুর্শিদাবাদের সুতি এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামের যুবক সোহেল আল মামুন। WBCS-এর গ্রুপ এ-তে ১৩৫ র্যাঙ্ক করেছেন তিনি। খুব শিগগিরই রাজ্য সরকারের আধিকারিক হতে চলেছেন সোহেল। যোগ দেবেন মহকুমা খাদ্য নিয়ামক আধিকারিক হিসেবে।
মুর্শিদাবাদের সুতি থানার তেনাউড়ি জগতাই এলাকার কৃতী সন্তান সোহেল আল মামুন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া এলাকা তেনাউড়ি গ্রামটি। এখানকার বাসিন্দা মৃত বরজাহান শেখ এবং সানাওয়ারি বিবির তিন সন্তানের মধ্যে ছোট সোহেল। তার যখন ছ’মাস বয়স, তখনই মা মারা যান৷ একরত্তি ছেলেকে বুকে আগলে রাখেন দিদা রূপবান বেওয়া। তাঁর কাছেই বড় হন সোহেল আল মামুন। ছ’বছরের মামুনের ঠাঁই হয় পাশের গ্রামে মামার বাড়িতে। বাবা শ্বাসকষ্টে ভুগতেন। বছর চারেক আগে বাবারও আকস্মিক মৃত্যু হয়। পরিবারে চরম দারিদ্র্য নেমে আসে।
তবে সেই অভাব-অনটন থাকলেও সোহেল কখনও শিক্ষার পথ ছেড়ে আসেননি। বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর ভর্তি হন শ্রীরামপুর টেক্সটটাইল কলেজে। সেখান থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। এরপর তাঁর ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া লড়াই শুরু হয়। অসুস্থ বাবার চিকিৎসার খরচ, পরিবারকে সাহায্য করা এবং নিজের খরচ জোগাতে কেন্দ্রীয় স্কুলে ভোকেশনাল ট্রেনার হিসেবে পার্ট টাইম কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি রাত জেগে ডব্লুবিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন সোহেল।২০২২ সালে পরীক্ষায় বসেন তিনি। বৃহস্পতিবার পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশিত হতেই চমক! গ্রুপ এ-র রাজ্যে ১৩৫ তম স্থান অধিকার করেছেন সোহেল আল মামুন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই মহকুমা খাদ্য নিয়ামকের পদে যোগ দেবেন তিনি। তাঁর এই সাফল্যে খুশির হাওয়া গোটা এলাকায়।