• আক্রান্ত তিন মাসের শিশু, চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে ডাক্তার সহ অভিভাবকদের!...
    আজকাল | ০৯ জুন ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০২০ এবং ২১ এর করোনা হাতছানি এবং লকডাউনের পর রাজ্য এবং কেন্দ্র উভয়ই কোভিড নিয়ে সচেতনতার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে ও নিচ্ছে। প্রথমদিকে করোনা আক্রান্তের কারণে বিভিন্ন রকম শারীরিক সমস্যা লক্ষ্য করা গেছে এবং তার সাথে সাথে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার ভয়াবহতাও যথেষ্ট চাপ ফেলেছে মানব সমাজে। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয়, শিশুদের ওপরে প্রকোপ ততটা ভয়াবহতার ছাপ বা প্রকোপ লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু এবারের করোনার নতুন ভেরিয়েন্টে 'ওমিক্রম স্ট্রেন'  শিশুদের ওপর সংক্রমনের পরিমাণ যথেষ্ট পরিমাণে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। 

    বলাবাহুল্য, চলতি বছরে মাঝে হঠাৎ করে করোনা নতুন ভেরিয়েন্ট দেশের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্তের পরিমাণটা নজরে পরার মতো এবং একই সাথে সেই আক্রান্তের পরিমাণটা সিংহভাগ শিশুদের ক্ষেত্রে হওয়ার কারণে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে চিকিৎসক সহ নাগরিকদের উপরেও। আর এক্ষেত্রে শিশুদের, মূলত সদ্যোজাতদের মধ্যে বেশি করে আক্রান্তের পরিমাণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। 

    উল্লেখযোগ্য বিষয়, বিগত সাত দিনের মধ্যে কলকাতা এবং রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আক্রান্তের সংখ্যা শিশুদের মধ্যে অধিক মাত্রায়। গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শহর কলকাতায় বেশ কিছু শিশু আক্রান্ত হয়েছে, তার মধ্যে সদ্যোজাত তিন মাসের শিশুও আক্রান্ত হয়েছে। যার কারনে চিকিৎসক সহ রাজ্য প্রশাসন যথেষ্টই চিন্তিত। এছাড়াও গত দুদিন আগে একটি সাত মাসের শিশু আক্রান্ত হয়ে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল, তাকে সুস্থ করে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এবার ফের আক্রান্ত তিন মাসের শিশুসহ ২৩ মাস, এক বছরের শিশুরাও। যারা বর্তমানে বাইপাসের ধরে  কলকাতা বেসরকারি হসপিটালে চিকিৎসাধীন। গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শহর কলকাতায় করোনা আক্রান্তে শিশুদের সংখ্যা আমাদের তথ্য অনুযায়ী ৬ জন, যাদের মধ্যে তিন মাস এবং এক বছরের শিশুরাও রয়েছে। 

    হাসপাতাল সূত্রে খবর,  * দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা ৩ মাসের এক শিশু, ৭ই জুন ২০২৫ তারিখে পিকিউ ইনচার্জ চিকিৎসক সাহেলি দাশগুপ্তার অধীনে সেই বেসরকারি হাসপাতালের আইসোলেশন ভর্তি রয়েছে। উচ্চ জ্বর, সর্দি, কাশি ও কম পরিমাণে প্রস্রাব হওয়ার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছে।শিশুর মা ও বাবার রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

    *  দক্ষিণ কলকাতা থেকে ১ বছর বয়সী এক শিশু ৭ই জুন, ২০২৫ তারিখে চিকিৎসক সঞ্জুক্তা দে-র অধীনে বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। উচ্চ জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে শিশুটি বেশ অসুস্থ অবস্থায় রয়েছে। শীঘ্রই তাকে 'পিকিউ' আইসোলেশন ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হবে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর।শিশুর মায়ের আরটিপিসিআর রিপোর্টের জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছে।

    উল্লেখ্য, কেন্দ্র সরকারের তথ্য অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭৪৭, গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৫৪ জন। তবে  রাজ্যে  সুস্থ হয়েছে মোট ৪১২ জন। আর সারা দেশে মোট এখনও পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৬৪৯১ জন এবং নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা গত ২৪ ঘন্টায় ৩৫৮ জন। মোট সুস্থ হয়েছে ৬৮৬১ জন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী।

    এই বিষয়ে আমরা সরাসরি কথা বলেছিলাম শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (পিয়ারলেস হাসপাতাল) সংযুক্তা দে এবং চিকিৎসক সহেলী দাশগুপ্ত সঙ্গে। চিকিৎসক সংযুক্তা দে বলেন, "বর্তমানে কভিডের যে সংক্রমণের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, সেটা হলো 'ওমিক্রন স্ট্রেন'। এটা খুব সহজেই এবং তাড়াতাড়ি ছড়ায় এবং অতটা লিখাল নয়। এই সংক্রমণ সব বাচ্চাদের মধ্যেই ছড়াচ্ছে তবে ভয়ের কিছু নেই। বড় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অর্থাৎ ১২-১৩ বছরের উর্ধ্বে তাদের বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করা যাবে। তবে ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখলে অনেক বেশি তাড়াতাড়ি সুস্থ করা যায়। বাড়িতে রেখে এন্টিবায়োটিক বা 'ওভার দা কাউন্টার' মেডিসিন খাওয়ালে তাতে আরও সমস্যা বাড়তে পারে। তবে এক্ষেত্রে বেশ কিছু উপসর্গ লক্ষ্য করা যাচ্ছে যেমন বমি ভাব, কাশি, জ্বর এবং একটা খিটখিটে ভাব। আবার অনেকেই আছে খাওয়ার খেতে চাইছে না, তা সরিয়ে দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করে আইসোলেশন রাখলে অনেক তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়া সম্ভব।" 

    শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সহেলি দাশগুপ্ত বলেন, "পূর্বে কোভিডে শিশুদের আক্রান্ত না হতে দেখা গেলেও, এবারের কোভিড ভেরিয়ান্টে বাচ্চাদের বা শিশুদের ওপরে আক্রান্তের পরিমাণ অনেক বেশি। তবে বাচ্চার বাবা মাকে ভয় পাওয়া বা প্যানিক করতে মানা করব , অনেক বেশি সচেতন থাকতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে বাচ্চাদের বারবার বেশি তাপমাত্রা জ্বর আসছে, পাতলা পায়খানা হচ্ছে, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে ইউরিন ঠিকমতো হচ্ছে না সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। প্রয়োজনে ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে হাসপাতালে স্থানান্তর করে আইসোলেশনে রেখে মনিটারিং করাটাই অনেক বেশি শ্রেয়।"
  • Link to this news (আজকাল)