• এসএসসির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করল না হাইকোর্ট, স্বস্তি রাজ্যের
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৯ জুন ২০২৫
  • এসএসসির নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছিল। আপাতত নিয়োগ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করল না আদালত। সোমবার উচ্চ আদালতের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, এখনই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করা হবে না। আবেদনকারীদের তরফে আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের সিঙ্গল বেঞ্চে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কিন্তু, বিচারপতি মামলাটি গ্রহণ করেননি। জুলাই মাসে গরমের ছুটির পর মামলার শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি।

    বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম আদালতে বলেন, ‘২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করেছে সুপ্রিম কোর্ট। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসএসসির নতুন বিজ্ঞপ্তিতে অনেক বিধিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই বিজ্ঞপ্তি ২০১৬ সালের বিজ্ঞপ্তির অনুরূপ নয়। নতুন এই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নিয়ম বদল হলে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের সুযোগ আরও কমে যাবে।’

    বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য বলেন, ‘এসএসসির নতুন বিজ্ঞপ্তি সংক্রান্ত বিষয়ে এখনই হস্তক্ষেপ করবে না হাইকোর্ট। আপাতত নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে চলবে। তবে ফের কোনও সমস্যা তৈরি হলে তখন আদালত বিষয়টি দেখবে। না হলে আগামী জুলাই মাসেই নির্ধারিত দিনে মামলা শুনবে আদালত।’ আপাতত জরুরি ভিত্তিতে এই মামলার শুনানি করার প্রয়োজন নেই বলেই উল্লেখ করেন বিচারপতি।

    চলতি বছর এপ্রিল শুরুতে ২০১৬ সালে এসএসসির নিয়োগ সংক্রান্ত গোটা প্যানেলটি ‘অসাংবিধানিক’ অ্যাখ্যা দিয়ে বাতিল করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এর ফলে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর চাকরি রাতারাতি বাতিল হয়ে যায়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে এসএসসি। গত মাসের শেষেই ২০১৬ সালের চাকরিহারাদের জন্য নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার বিজ্ঞপ্তি জারি করে এসএসসি। পরীক্ষার বিধিতেও নানা বদল আনা হয়।

    স্কুল সার্ভিস কমিশনের নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা দায়ের হয়। মামলাকারীরা কলকাতা হাইকোর্টের গ্রীষ্মাবকাশকালীন বেঞ্চে মামলা দায়ের করেছিলেন। বিজ্ঞপ্তির একাধিক বিষয় বৈষম্যমূলক ও আপত্তিকর বলে অভিযোগ করেন মামলাকারীদের আইনজীবী। আবেদনে বলা হয়, আগামী ১৬ জুন থেকে বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদনপত্র গ্রহণ করা হবে চাকরিপ্রার্থীদের থেকে। তার আগে জরুরি ভিত্তিতে মামলার শুনানি প্রয়োজন।

    এসএসসির প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ মিলিয়ে মোট শূন্যপদ রয়েছে ৩৮৭২৬টি। এর মধ্যে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষকের শূন্যপদ ২৩২১২। একাদশ-দ্বাদশের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা ১২৫১৪। নয়া বিধি অনুসারে, জোর দেওয়া হয়েছে শিক্ষকতার পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং ক্লাস নেওয়ার দক্ষতার উপর।

    নতুন বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষকতার পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং ক্লাস নেওয়ার দক্ষতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।  নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পরীক্ষা হবে ৬০ নম্বরের। এটি আগে ৫৫ নম্বর ছিল। শিক্ষাগত যোগ্যতার উপরে থাকবে সর্বোচ্চ ১০ নম্বর। আগে এটি ছিল ৩৫ নম্বর। ইন্টারভিউয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নম্বর অপরিবর্তিত থাকছে। এই ক্ষেত্রে আগে ১০ নম্বর ছিল, নতুন নিয়োগ বিধিতেও তা-ই রাখা হয়েছে। শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার উপর দেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ ১০ নম্বর। এ ছাড়া ‘লেকচার ডেমোস্ট্রেশন’-এর জন্যও সর্বোচ্চ ১০ নম্বর রাখা হচ্ছে। আগামী ১৬ জুন থেকে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন পরীক্ষার্থীরা। ১৪ জুলাই পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। ১৪ জুলাই রাত ১২টার আগে পরীক্ষায় বসার ফি জমা দিতে হবে।

    মামলাকারীদের দাবি ছিল, ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিধি ২০১৬ সালের মতোই করতে হবে। চাকরিপ্রার্থীদের যোগ্যতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আরও নানা মাপকাঠি সংযোজন করা হয়েছে। যেমন, শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা এবং ‘লেকচার ডেমনস্ট্রেশন’-এর উপরেও থাকছে নির্দিষ্ট নম্বর। এর ফলে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা আরও পিছিয়ে পড়বেন বলে দাবি করা হয়। মামলাকারীর বক্তব্য ছিল, অযোগ্যদের বাঁচাতে চাইছে সরকার। তাই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরিপন্থী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু সেই আবেদন কার্যত মানল না কলকাতা হাইকোর্ট। নতুন বিজ্ঞপ্তি মামলায় হস্তক্ষেপ করল না আদালত।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)