• সংস্কারের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই বেহাল
    বর্তমান | ১০ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: সংস্কার কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়ক বেহাল হয়ে পড়েছে। প্রায় ১৪০ কোটি টাকা খরচে গুরুত্বপূর্ণ ওই রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু হয়। পূর্তদপ্তরের বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর ডিভিশনের তত্ত্বাবধানে ওই সংস্কার কাজ এখনও চলছে। এরইমধ্যে একাধিক জায়গায় রাস্তার পিচ উঠে গিয়েছে। সারেঙ্গা, রাইপুর ব্লক এলাকায় রাস্তা খানাখন্দে ভরে গিয়েছে। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তার কাজ হয়েছে বলে বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন। একাধিক ঠিকাদার সংস্থা ওই রাস্তা সংস্কারের কাজ করছে। সাধারণত ঠিকাদার সংস্থার তরফে টেন্ডার প্রক্রিয়ার সময় ছাড় বা ‘লেস’ দিয়ে কাজ ধরা হয়। কিন্তু, এক্ষেত্রে তা হয়নি। ঘটনায় পূর্তদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। এনিয়ে ভবিষ্যতে দপ্তরকে কৈফিয়ত দিতে হতে পারে বলেও তাঁরা আশঙ্কা করছেন। কিন্তু, কেনও ছাড় না দেওয়া ঠিকাদার সংস্থাকে কাজ পাইয়ে দেওয়া হল, তা নিয়ে আধিকারিকরা কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

    পূর্তদপ্তরের বিষ্ণুপুর ডিভিশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় সাহানা বলেন, ওই রাস্তা সংস্কারের পর এখনও আমাদের হস্তান্তর করা হয়নি। তারমধ্যেই তিন জায়গায় রাস্তা ভেঙেচুরে গিয়েছে। বিষয়টি আমাদের নজরে পড়েছে। এনিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। বাঁকুড়া ডিভিশনের এক আধিকারিক বলেন, সাধারণত যে টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়, তার থেকে কমে ঠিকাদাররা কাজের বরাত পেয়ে থাকেন। কিন্তু, এক্ষেত্রে সেই ছাড় না দিয়েই ঠিকাদার কাজের বরাত পান। স্থানীয়দের কাছ থেকে রাস্তা বেহাল হয়ে পড়ার ব্যাপারে অভিযোগ পাচ্ছি। পিচের কাজ হয়ে যাওয়ার পর ওই রাজ্য সড়কের উপরে থাকা একাধিক কালভার্ট নির্মাণ শুরু হয়েছে। সেখানে কোনও অনিয়ম হচ্ছে কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। 

    পূর্তদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়ক অনেকটাই লম্বা। সেই কারণে ওই সড়ক দু’ভাগে ভাগ করে পূর্তদপ্তরের বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর ডিভিশন দেখভাল করে। বাঁকুড়া-১ ব্লকের ধলডাঙা এলাকা থেকে সিমলাপালের শিলাবতী নদীঘাট পর্যন্ত রাস্তার ৩৫ কিলোমিটার অংশ বাঁকুড়া ডিভিশনের আওতায় পড়ে। সিমলাপাল থেকে রাইপুরের বেনাগাড়ি পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার বিষ্ণুপুর ডিভিশনের অন্তর্গত। বছরখানেক আগে দু’দফায় ওই সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হয়। তার আগে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। বাঁকুড়া ডিভিশনের আওতায় থাকা রাস্তার জন্য প্রায় ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। বিষ্ণুপুরে ডিভিশনের অন্তর্গত সড়কের জন্য ৭০ কোটি টাকারও বেশি মঞ্জুর করা হয়েছিল। ওই টাকায় কাজ শুরু হয়। সম্প্রতি রাইপুর ও সারেঙ্গা ব্লক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেশকিছু জায়গায় রাস্তার পিচ ও পাথর উঠে গিয়েছে। আগামী বর্ষায় ওই জায়গায় জল দাঁড়িয়ে রাস্তার হাল আরও খারাপ হবে বলে নিত্যযাত্রীদের আশঙ্কা। অবিলম্বে রাস্তার ওইসব বেহাল অংশ মেরামতের পাশাপাশি গোটা সড়কের সংস্কার কাজের মান পরীক্ষা করে দেখার দাবিও উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, শুরু থেকেই কাজের মান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছিল। কাজের জন্য নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছিল। তা নিয়ে ঠিকাদার সংস্থার লোকজনের কাছে বাসিন্দারা আপত্তিও জানিয়েছিলেন। কিন্তু, তাঁরা এব্যাপারে কর্ণপাত করেননি। যদিও ঠিকাদার সংস্থার তরফে ওই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তাঁদের দাবি, নিয়ম মেনেই যাবতীয় কাজ হয়েছে। কোনও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি।
  • Link to this news (বর্তমান)