জাইকার পানীয় জল পেতে আরও ৬ মাস জেলার বাকি ১৫ ব্লকের তৃষ্ণা মিটবে কীভাবে
বর্তমান | ১০ জুন ২০২৫
পিনাকী ধোলে, পুরুলিয়া: শুরুর দিকে চরম গড়িমসি, একাধিকবার পরিকল্পনায় বদল, তার উপর জমিজট! যার জেরে সময়মতো শুরু হয়নি ‘জাইকা’ প্রকল্পের কাজ। কাজ কবে শেষ হবে, তা নিয়েও টালবাহান অব্যাহত। কথা ছিল, চলতি বছরের মার্চের মধ্যেই জাইকা প্রকল্পের ট্রায়াল রান শুরু হবে। মিলবে পরিস্রুত পানীয় জল। তবে, প্রশাসনের আধিকারিকদের দাবি, জাইকা প্রকল্পের জল পেতে বাসিন্দাদের এখনও প্রায় ছ’মাস অপেক্ষা করতে হবে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের ডিস্ট্রিক্ট ইঞ্জিনিয়ার সনৎ অধিকারী বলেন, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় জাইকা প্রকল্পের কাজ চলছে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত আশাবাদী।
প্রসঙ্গত, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই ২০১৩-’১৪ সাল নাগাদ জাপানের আর্থিক সহায়তায় কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ উদ্যোগে জাইকা(জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি) প্রকল্পে পুরুলিয়া জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা মেটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু, নানা জটিলতায় প্রকল্পের কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়। পরিবর্তন হয় প্রকল্পের নকশারও। ২০১৯ সালের গোড়ার দিকে প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন মেলে। বরাদ্দ হয় ১২৯৬ কোটি টাকা। সিদ্ধান্ত হয়, মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে জল তোলা হবে। তারপর তা পরিস্রুত করে জেলার দক্ষিণ-পূর্ব অংশের পাঁচটি ব্লকে সরবরাহ করা হবে। জনস্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, মানবাজার-১, পুঞ্চা, বরাবাজার ও পুরুলিয়া-১ ব্লকের আংশিক এবং আড়ষা ব্লকের সর্বত্র পানীয় জল পৌঁছবে। ৪৫৮টি মৌজার মোট ৯২ হাজার ২৭টি পরিবার ওই প্রকল্পের মাধ্যমে নলবাহিত জল পাবে। তারজন্য মোট ৪২টি ওভারহেড ট্যাঙ্ক তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি, পুরুলিয়া পুরসভাও দৈনিক প্রায় ১২.৯২ মিলিয়ন লিটার জল পাবে। তবে, প্রকল্পের কাজে গড়িমসি হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে জেলায় এসে এনিয়ে চরম অসন্তোষও প্রকাশ করেছিলেন তিনি। তারপর থেকে ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করতে সবরকম চেষ্টা করতে থাকেন প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়াররা। মার্চের মধ্যে ট্রায়াল রান হবে বলে প্রতিশ্রুতিও মেলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তরফে। কিন্তু তা হয়নি। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, পাইপ লাইনের কাজও প্রায় শেষ হওয়ার মুখে। মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে জল উত্তোলনের কাজ এখনও অনেকটাই বাকি রয়েছে। দিনরাত এক করে সেই কাজ চলছে। আশা করছি, ডিসেম্বর থেকে জল দিতে পারব। জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, জমিজটের জেরে প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়েছে অনেক দেরিতে। প্রায় ১৭-১৮ মাস কাজ পিছিয়ে গিয়েছে। তাছাড়া, মুকুটমণিপুর জলাধারে ‘পাইলিং’ করার সময় নীচে পাথর থাকার জন্য কাজ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের দেড়গুণ বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। কয়েকবার পাইলিং করার সময় জল ঢুকে গিয়ে বিপত্তি ঘটে। আপাতত জলাধারের জল কমিয়ে পাইলিংয়ের কাজ করা হচ্ছে। জলাধার থেকে অস্থায়ীভাবে জল উত্তোলন করে পাইপ পরিষ্কারের কাজও শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, জাইকা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পুরুলিয়া শহর সহ মোট পাঁচটি ব্লকের বাসিন্দারা উপকৃত হবেন। কিন্তু, বাকি ১৫টি ব্লকের মানুষের তো জল যন্ত্রণা রয়েই যাচ্ছে। তাদের কী হবে? (শেষ)