নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই কোলাঘাটে নিজেদের উদ্যোগে খাল কাটার সিদ্ধান্তে অনড় সিপিএম-বিজেপি জোটের বৈষ্ণবচক পঞ্চায়েত। ওই পঞ্চায়েত খাল কেটে সেই মাটি অবৈধভাবে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ। এই অভিযোগ পেয়ে বিডিও অর্ঘ্য ঘোষের নির্দেশে গত ৬ জুন রেভিনিউ ইনসপেক্টর তাপস মাইতি পুলিস নিয়ে এলাকায় গিয়ে শারীরিকভাবে নিগৃহীত হন। পুলিসের গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়। সেই ঘটনার পরই বিডিও ওই খাল কাটার কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। গত ৭ ও ৮ জুন খাল কাটার কাজ বন্ধ ছিল। এই অবস্থায় সোমবার সিপিএম-বিজেপি জোটের গ্রাম পঞ্চায়েত সাধারণ সভার মিটিংয়ে বসেছিল। সেখানে ঠিক হয়েছে, প্রশাসনের মৌখিক নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই খাল কাটার কাজ চালিয়ে যাওয়া হবে।
কোলাঘাট ব্লকের বৈষ্ণবচক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে শ্রুতি ও নাসা খাল। ওই খাল সংস্কারের জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েত বিডিও এবং সেচদপ্তরের দ্বারস্থ হয়েছিল। কিন্তু, সেচদপ্তর কিংবা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই খাল সংস্কারের কাজ শুরু না হওয়ায় পঞ্চায়েত নিজের উদ্যোগে ঠিকাদার নিয়োগ করে জেসিবি দিয়ে কাজ শুরু করে। সেই খাল থেকে কাটা মাটি অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছিল বলে অভিযোগ। কোলাঘাটের বিডিও-র কাছে এই মর্মে অভিযোগ আসায় ৬ জুন তিনি ব্লক ভূমি অফিসার এবং থানার ওসিকে গোটা বিষয়টি জানান। এরপর স্থানীয় রেভিনিউ ইনসপেক্টর এবং কোলাঘাট থানার পুলিস জয়েন্ট ইনসপেকশন করতে স্থানীয় কলাগেছিয়া গ্রামে হাজির হন। সেদিন কলাগেছিয়া গ্রামে একটি জেসিবি দিয়ে খাল কাটার কাজ চলছিল। এছাড়াও মাটি তোলার কাজে দু’টি ট্রাক্টর লাগানো হয়েছিল। পুলিস দেখে জেসিবি ও ট্রাক্টর চালকরা চম্পট দেয়।
অভিযোগ, পঞ্চায়েতের মদতে স্থানীয় কয়েকজন পুলিস এবং রেভিনিউ ইনসপেক্টরের উপর চড়াও হন। ওই ঘটনায় কোলাঘাটের ব্লক ভূমি অফিসার চিন্ময় বিশ্বাস থানায় এফআইআর করেছেন। কোনও অবস্থায় খাল কাটা যাবে না বলে কোলাঘাটের বিডিও গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে সাফ জানিয়ে দেন। তারপর ৭ ও ৮ দু’দিন খাল কাটার কাজ বন্ধ ছিল। সোমবার পঞ্চায়েত জরুরি ভিত্তিতে সাধারণ সভার বৈঠক ডাকে। সেখানে ঠিক হয়েছে, প্রশাসনের লিখিত কোনও নিষেধাজ্ঞার কপি না দেওয়ায় খাল কাটার কাজ পুনরায় শুরু হবে। নিকাশি সমস্যার সমাধান এবং বোরো মরশুমে চাষের সুবিধার কথা মাথায় রেখে ওই খনন কাজ চলবেই।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ২২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল আটটি, বিজেপি পাঁচটি, সিপিএম পাঁচটি, কংগ্রেস একটি, আইএসএফ একটি এবং নির্দল দু’টি আসনে জয়ী হয়। প্রধান হয়েছেন সিপিএমের রূপসাহানাজ পারভিন বেগম এবং উপপ্রধান হয়েছেন বিজেপির শিবনাথ সামন্ত। বিরোধীরা একত্রিত হয়ে বোর্ড গঠন করেছে। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বলেন, ওই খাল সংস্কার জরুরি। এজন্য আমরা ব্লক প্রশাসন ও সেচদপ্তরের দ্বারস্থ হয়েছি। কিন্তু, সংস্কার আটকে থাকায় পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল থেকে খাল কাটার সিদ্ধান্ত হয়। অবৈধভাবে মাটি বিক্রির দাবি একেবারে মিথ্যা। আমরা ফের খাল কাটার কাজ শুরু করব। কোলাঘাটের বিডিও অর্ঘ্য ঘোষ বলেন, বৈষ্ণবচক গ্রাম পঞ্চায়েত খাল কেটে অবৈধভাবে মাটি বিক্রি করছে বলে খবর ছিল। অভিযোগ পেয়ে ভূমি দপ্তর ও পুলিস জয়েন্ট ইনসপেকশনে গিয়ে আক্রান্ত হন। তারপর কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিজস্ব চিত্র