• খুনের পর নিথর স্বামীর সঙ্গেই রাত কাটায় মিতা
    বর্তমান | ১০ জুন ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কাটোয়া: অপরাধ করার পর সেই অপরাধকে ঢাকা দিতে অমানবিকতার সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল স্বামী খুনে অভিযুক্ত মিতা দাস। 

    কোলে সাড়ে তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে স্বামীকে নির্মম, নৃশংসভাবে খুন করে সে। গোবর লেপে রক্তের দাগও মোছে। সেই অপরাধকে ধামাচাপা দিয়ে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে স্বামীর ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ হয় বলে প্রমাণের মরিয়া চেষ্টা চালায় মিতা। নিথর দেহকে খাটে তুলে পরিপাটি করে প্রথমে সাজিয়ে রাখে। যাতে সকালে কেউ দেখে মনে করে, সত্যিই ঘুমের ঘোরে স্বামীর স্ট্রোক হয়েছে। এবং তিনি মারা গিয়েছেন। আর এই দাবিকে জোরদার করতে সেই খাটে ছেলে-মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে নিজেও শুয়ে পড়ে মৃত স্বামীর পাশে। গোটা রাত নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকে। কাকভোরে প্রথম শাশুড়িকে ডেকে নাটক শুরু করে মিতা। হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘স্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছে তোমার ছেলের।’ কিন্তু মিতার সব নাটকই ধরে ফেলেন তদন্তকারী অফিসাররা। তার এমন নৃশংসতা ও অমানবিকতার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই তাজ্জব পড়শিরা। মিতার কঠোর শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন সকলেই।  

    সোমবার ধৃত মিতাকে কাটোয়া মহকুমা এসিজেএম আদালতে তোলা হয়৷ বিচারক তাকে ৩ দিন পুলিস হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি, মায়ের কীর্তির একমাত্র সাক্ষী নিহতের সাড়ে তিন বছরের ছেলের গোপন জবানবন্দিও নেওয়া হয়৷ এদিন আদালতে তোলার সময় নির্বিকার ছিল মিতা। অনুশোচনার লেশমাত্র ছিল না তার চোখে-মুখে। আদালত চত্বর থেকে নিহতের ছেলে ও মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে যান ঠাকুমা কাঞ্চন দেবী। 

    শনিবার রাতে কাটোয়ার আমুল গ্রামের বাসিন্দা মহাদেব দাসকে খুন করার অভিযোগ ওঠে তাঁর স্ত্রী মিতার বিরুদ্ধে। বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়াতেই স্বামীকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্ল্যান কষে। সেই প্ল্যানও ছিল বেশ নিখুঁত। প্রথমে মদের সঙ্গে অ্যাসিড মিশিয়ে স্বামীকে খাওয়ায়। কিছু পরেই মহাদেব বেহুঁশ হয়ে পড়ে। তারপর তাঁর মাথার পিছনে বাঁশ দিয়ে সজোরে  আঘাত করে। কিছু সময় ছটফট করার পর নিথর হয়ে যান মহাদেব। মৃত্যু নিশ্চিত করতে মুখে বালিশ চেপে ধরে মিতা। রবিবার ভোরে ঘুম থেকে উঠে শাশুড়িকে ডেকে আনে। কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। পাড়া-প্রতিবেশীরাও ছুটে আসেন৷ পরে কাটোয়া থানার পুলিস এসে দেহ উদ্ধার করে পাঠায় ময়নাতদন্তে পাঠায়।  ছেলের মৃত্যুতে বউমার স্ট্রোক-তত্ত্ব মানতে পারেননি মা কাঞ্চন দাস। তিনি কাটোয়া থানায় লিখিতভাবে খুনের অভিযোগ জানান৷ এদিনও তিনি বলেন, ‘বউমা ও তার প্রেমিক মিলে আমার ছেলেটাকে খুন করে দিল৷ আমরা ওদের চরম শাস্তি চাই। বাচ্চা দুটো অনাথ হয়ে গেল।’  

    অভিযোগের ভিত্তিতে মিতাকে গ্রেপ্তার করে ম্যারাথন জেরা শুরু করেন দুঁদে তদন্তকারীরা। তাতেই ভেঙে পড়ে সব স্বীকার করে নেয় সে। এমনটাই পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে। পুলিসের কাছে মিতা দাবি করে, খুনের ঘটনার সময় তার মেয়ে ঘুমিয়ে ছিল৷ ছেলেটা কিছুতেই ঘুমোচ্ছিল না। সে সব দেখেছে! খুনের পরিকল্পনা করে দীর্ঘদিন ধরে। ঘটনার দিন পাশেই তার এক দেওরের কাছে মদ চেয়ে এনেছিল৷ সেই মদের সঙ্গে অ্যাসিড মিশিয়ে রেখে দিয়েছিল। কাজ সেরে রাতে স্বামী মহাদেব বাড়িতে ফেরে। একসঙ্গেই খাওয়াদাওয়া সারে। রাত দশটা নাগাদ ভালোবেসে স্বামীকে অ্যাসিড মেশানো মদ খেতে দেয় মিতা। সাদা মনে সেটা খেয়েই বেহুঁশ হয়ে পড়ে মহাদেব। তারপরেই বাঁশের একটা মোটা লাঠি দিয়ে তাঁর মাথায় সজোরে আঘাত করে। এরপর মৃতু নিশ্চিত করতে মহাদেবের মুখে বালিশ চাপা দিয়ে ধরে।  নিহতের মা কাঞ্চন দাস বলেন, ‘বউমা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে ছিল৷ পাঁচ মাস আগে একজনের সঙ্গে বীরভূমের নানুর থানা এলাকায় পালিয়েছিল। পরে আবার ছেলে মেয়ে নিয়ে সে ফিরেও এসেছিল৷ কিন্তু সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিল৷ আমার ছেলে সেটার প্রতিবাদ করেছিল। আমাদের টিনের ছাউনির ঘর। কিন্তু বউমার লাইফস্টাইল ছিল সম্পূর্ণ আলাদা৷ আর এসব করতে প্রায়ই ছেলের কাছে টাকা চাইত। সংসারে কাজ করত না৷ ছোটো মেয়েকে দিয়ে বাসন মাজাত৷’ 

    এদিন পড়শিরা বলছিলেন, এরকম হাড়হিম ঘটনা শুনে চমকে উঠছি।’ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এতসব কিছু মিতা একাই করেছিল, নাকি তাকে কেউ সাহায্য করেছে? উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা।  আদালতের পথে স্বামী খুনে ধৃত মিতা দাস। নিজস্ব চিত্র 
  • Link to this news (বর্তমান)