হলদিয়া বন্দরে মন্ত্রীর অনুষ্ঠানে ডাক পেলেন না বিধায়ক ও সাংসদ, বিতর্ক
বর্তমান | ১০ জুন ২০২৫
সংবাদদাতা, হলদিয়া: হলদিয়ার বিজেপি বিধায়ক তাপসী মণ্ডল সম্প্রতি তৃণমূলে যোগদান করেছেন। তাই বিধায়ককে এড়াতে সোমবার হলদিয়া বন্দরে কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের অনুষ্ঠানে ডাক পেলেন না খোদ স্থানীয় বিজেপি সাংসদ। এনিয়ে বিতর্কের জবাব দিতে গিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন স্বয়ং মন্ত্রী। এদিন মন্ত্রী বন্দরে ২ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। সেখানে স্থানীয় বিধায়ক ও সাংসদকে দেখা যায়নি। এবিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, এটা বন্দরের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখানে এমপি বা এএলএদের থাকতেই হবে এমন কোনও ব্যাপার নয়। এটা অফিসিয়ালদের নিয়ে একটা বন্দরের নিজস্ব অনুষ্ঠান। এখানে এমএলএ, এমপিদের যোগ দেওয়ার দরকার নেই। স্বাভাবিকভাবেই অফিসের ভেতরের প্রোগ্রামে থেকে তাঁরা কী করবেন। কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলে ঠিক আছে, না হলে অফিসিয়াল প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার দরকার নেই। বন্দরের অনুষ্ঠানে বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে বন্দরের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল কি না, তা নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ ধন্দ তৈরি করেছে বলে অভিযোগ।
বন্দর সূত্র জানিয়েছে, বিধায়ককে এড়াতেই সাংসদকে ডাকা হয়নি। এর আগে অবশ্য জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের একাধিক অনুষ্ঠানে সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীকে দেখা গিয়েছে। তবে মন্ত্রীর দাবি, সাংসদকে ডাকা হয়েছিল, কিন্তু উনি আসেননি। তবে এটি বন্দরের নিজস্ব অনুষ্ঠান, এখানে এমএলএ, এমপিদের যোগ দেওয়ার দরকার নেই— মন্ত্রীর এমন মন্তব্যে ফের শুরু হয়েছে বিতর্ক। শুধু তাই নয়, এদিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর হলদিয়া সফর ঘিরে একগুচ্ছ বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অভিযোগ, এদিন প্রকাশ্য সভায় বন্দরের লেবার সাপ্লায়ার ঠিকাদারদের হয়ে সওয়াল করেছেন।
এনিয়ে সরাসরি বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি প্রোগ্রামে হলদিয়া এসে ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের অফিসে গিয়ে গাছের চারা পুঁতেছেন এবং শ্রমিক নেতাদের আপ্যায়নও গ্রহণ করেছেন। এনিয়েই শুরু হয়েছে জোর চর্চা। তবে বিএমএসের রাজ্য সভাপতি প্রদীপ বিজলি বলেন, মন্ত্রীর কাছে নতুন অফিসে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম, উনি কথা রেখেছেন। উনি তো বন্দরের শ্রমিকদের অফিসে এসেছেন, এতে ক্ষতি কোথায়? হলদিয়ার বিধায়ক তাপসী মণ্ডল মন্ত্রীর এই বক্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তিনি বলেন, কেন্দ্র সরকারের মন্ত্রী কোনটা দলের প্রোগ্রাম, কোনটা সরকারি প্রোগ্রাম তা ভুলে গিয়েছেন। উনি এভাবে বিধায়কের পাশাপাশি তো দলের সাংসদকেও অপমান করেছেন এধরনের মন্তব্য করে। এদিন মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর দুপুর ২টো নাগাদ বন্দরের গেস্ট হাউসে পৌঁছন। সেখান থেকে বন্দরের এনভায়রনমেন্ট পার্কে গাছ লাগিয়ে আসেন হাতিবেড়িয়ায়। ওই এলাকায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দর একটি সোলার পার্ক তৈরি করছে, যা আগামীতে ডক এলাকায় বিদ্যুৎ জোগাবে। সেই প্রকল্পের শিলান্যাস করে ডক এলাকায় আদানির নির্মীয়মাণ জেটি দেখতে যান মন্ত্রী। এরপর বন্দরের বিবি ঘোষ অডিটোরিয়ামে বন্দর ব্যবহারকারী ও ঠিকাদারদের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনায় বসেন। এরপর সন্ধেয় বন্দরের আধিকারিকদের নিয়ে সভা করেন। এদিন ড্রেজিং ভর্তুকি কেন বন্ধ হয়েছে তার সদুত্তর দিতে পারেননি মন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দিকে তাকিয়ে বন্দর বাণিজ্যে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বন্দরের সুরক্ষা এবং স্বচ্ছ্বতায় জোর দেওয়া হচ্ছে এবং পরিকাঠামোর জন্য নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে। হলদিয়া বন্দরে সাপ্লাই লেবারের টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে নয়া জটিলতা তৈরি হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ চাইছে, বন্দরের পাঁচটি বিভাগের অধীনে ৮৫৫ জন শ্রমিকের জন্য পাঁচ জন ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। এরপরই বন্দরের ঠিকাদার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এবং এদিন তাঁরা মন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেন। ওই অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে ৩০ জন ঠিকাদার আছেন। মন্ত্রী এদিন স্পষ্ট জানান, কারও পেটে লাথি মারা হবে না।