সংবাদদাতা বোলপুর: শান্তিনিকেতনের হেরিটেজ কোর এরিয়া রক্ষায় বড়সড় পদক্ষেপ নিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট এলাকায় ৪২টি গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপত্য রয়েছে। সেগুলির সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন। গত ১৫ মে সেন্ট্রাল অফিসের কনফারেন্স হলে উপাচার্যের নেতৃত্বে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে। গোটা পরিকল্পনাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিশ্বভারতীর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেলের অধীনে নিযুক্ত সাইট ম্যানেজার অধ্যাপক অনিল কুমারকে।
২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর শান্তিনিকেতনকে ওয়ার্ল্ড লিভিং হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করে ইউনেস্কো। আশ্রমের পঠন পাঠন, ভাবনা ও মৌলিক পরিবেশ অক্ষুন্ন রাখার জন্য শান্তিনিকেতনকে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে, এই মৌলিকত্ব বজায় রাখা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ ঘোষণার পাশাপাশি এটাও সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, হেরিটেজ স্বীকৃতি হারানোর আশঙ্কার কথাও। তাই, কোর হেরিটেজ জোনকে নিয়মিত সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শান্তিনিকেতনের এই কোর হেরিটেজ জোন প্রায় ৩৭ হেক্টর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এর বাইরে যে এলাকাটি রয়েছে, তা হেরিটেজ বাফার জোন বলে চিহ্নিত। এই কোর হেরিটেজ এলাকায় অবস্থিত যাবতীয় ভবন, স্থাপত্য রয়েছে। সেগুলি ইউনেস্কোর গাইডলাইন অনুযায়ী রক্ষণাবেক্ষণ বাধ্যতামূলক। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভাবধারা ও গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সৃষ্ট আশ্রমের পরিবেশ অপরিবর্তিত রাখাও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। তাই হেরিটেজ ঘোষণার আগেও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে ঐতিহ্যবাহী ভবন ও স্থাপত্যগুলি সংস্কার করে এসেছে। তার মধ্যে ২০২১ সালে সব থেকে বড় আকারে শান্তিনিকেতন ক্যাম্পাসে সংস্কারের কাজ হয়। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (এএসআই)-এর তত্ত্বাবধানে এই সময়কালে সিংহ সদন, চৈত্য, পাঠভবন অফিস, কালো বাড়ি, রামকিঙ্কর বেজের বিভিন্ন স্থাপত্য সহ মোট ২২টি ঐতিহ্যবাহী ভবনের সংরক্ষণ করা হয়। যদিও বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, এএসআইয়ের তত্ত্বাবধানে সংস্কার অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এক আধিকারিক জানিয়েছেন, তাই যে সমস্ত ভবন বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার করা সম্ভব, সেগুলি কলাভবনের শিল্পী, অধ্যাপক ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ আধিকারিকদের এই কাজে নিযুক্ত করা হয়। তার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি উপাসনা গৃহের পাশে অবস্থিত তালধ্বজ ও নতুন বাড়ির সংস্কার বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টাতেই করা হয়েছে। তাই ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য ও ভবনগুলি সংরক্ষণের জন্য নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের উপর জোর দিল কর্তৃপক্ষ। এরজন্য ৪২টি ভবন ও স্থাপত্যকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে প্রাচীনতম হিন্দি ভবন ও সঙ্গীত ভবনে সংস্কারের কাজ খুব তাড়াতাড়ি শুরু করা হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে। ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ বলেন, হেরিটেজ ভবনের সংরক্ষণ কেবল ঐতিহাসিক মূল্য সংরক্ষণ নয়, বিশ্বভারতীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের রক্ষাও বটে। সেই দায়িত্ব পালনে এবার আরও পদক্ষেপ নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্বভারতীর এই উদ্যোগ শুধুমাত্র স্থাপত্য সংরক্ষণ নয়, শান্তিনিকেতনের ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্য ও রবীন্দ্র-সংস্কৃতির ধারাকে অক্ষুণ্ণ রাখার দিকেও এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।