নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: ওড়িশায় প্রচলিত বিশ্বাস, জগন্নাথ দেবের আশীর্বাদ ছাড়া যে কেউ তাঁর রথ রং করতে পারেন না। অন্যথায় রং ফ্যাকাশে হয়ে যাবে। আষাঢ় মাসে শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে রথযাত্রা শুরু। রথ রং করার কাজের ভার পড়েছে ঝাড়গ্রাম জেলার চিচিড়া গ্ৰামের তরুণ শিল্পী সীতেশ সাহার উপর। বাঙালি শিল্পীর ছোঁয়ায় সেজে উঠবে নন্দীঘোষ, তালধ্বজ ও দর্পদলন রথ।
পুরীর মন্দির সংলগ্ন এলাকায় নিমকাঠ দিয়ে রথ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। স্নান পূর্ণিমা ১১ জুন। প্রথা মেনে তারপরেই রথের রং করা শুরু হবে। গত তিন বছর ধরে ২৭ বছরের সীতেশ রথের রং করে চলেছেন। নয়গ্ৰাম ব্লকের নাগরিপাদা হাইস্কুল থেকে ২০১৪ সালে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর জামশেদপুরের টেগর আর্ট অ্যান্ড ক্রাফ্ট অ্যাকাডেমিতে চার বছর আর্ট নিয়ে পড়াশোনা করেন। জামশেদপুরেই সেন্ট মেরি স্কুলে ফাইন আর্টস নিয়ে দু’ বছর পড়াশোনা করেন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় রাকেশ গিরির। রাকেশরা বংশ পরম্পরায় পুরীর রথ রং করার কাজে নিযুক্ত। রাকেশের সংস্পর্শে এসে ওড়িশার প্রাচীন শিল্পকলার প্রতি আগ্ৰহ জন্মায় সীতেশের। পুরীর রঘুরাজপুরে আট মাস ধরে হাতেকলমে ওড়িশা শিল্পকলার চর্চা করেন। তিন বছর আগে জগন্নাথ দেবের রথের রং করা এক প্রবীণ শিল্পীর আবেদনে রথের চাকায় তুলির টান দিয়েছিলেন সীতেশ। তাঁর তুলির টানে রং উজ্জ্বল হয়ে ফুটে ওঠে। উপস্থিত শিল্পীরা বিস্মিত হয়ে যান। তারপরেই পুরীর মন্দির কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে রং করার সুযোগ পান। প্রতিবারের মতো এবার জগন্নাথ দেবের ৪৫ ফুট উচ্চতার নন্দীঘোষ রথ লাল এবং হলুদ রঙের হবে। ষোলো চাকার রথে চারটি ঘোড়া সাদা রঙের হবে। বলরামের রথের নাম তালধ্বজ। রথের উচ্চতা ৪৪ ফুট। এর রং হবে লাল ও সবুজ। চৌদ্দটি চাকা থাকে। চারটে ঘোড়ার রঙ হয় কালো। সুভদ্রার রথ দর্পদলন। উচ্চতা হয় ৪৩ ফুট। ১২টি চাকা থাকে। রথ লাল ও কালো রঙ করা হয়। রথের সামনে থাকা চারটি ঘোড়া লালচে বাদামী বর্ণের হয়। প্রতিটি রথেই হাতি ও সিংহের কারুকার্য করা থাকে, যার নাম ষড়ভুজ। রথের চূড়ায় দুয়ারগড়া নামের কারুকার্য থাকে। জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার আট সখীর ছবি রথের গায়ে ফুটিয়ে তোলা হয়। কালী, ভৈরব, বিষ্ণু অবতার, শিব পার্বতী, নরসিংহ সহ একাধিক মূর্তি থাকে। সীতেশ বলেন, জগন্নাথ দেবের কৃপায় তিনবছর আমি রথের রং করছি। রঙের কাজ চলাকালীন নিরামিষ খেতে হয়। স্নান করে পরিচ্ছন্ন বস্ত্রে রং করতে হয়। একটি রথের অবশিষ্ট রং অন্য রথে ব্যবহার করা যায় না। দেবতার কৃপাতেই ভিন রাজ্যের বাসিন্দা হয়েও কাজ করতে পারছি। পুরীর রথে রং করছেন সীতেশ সাহা।-নিজস্ব চিত্র