• এসএসসির ৪৪ হাজার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বাধা দিল না হাইকোর্ট
    বর্তমান | ১০ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বাতিল হয়েছে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশমতো নিয়োগের নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। সেই ৪৪ হাজার ২০৩ শূন্যপদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বাধা দিল না কলকাতা হাইকোর্ট। এসএসসির বিজ্ঞপ্তির  বিরোধিতা করে উচ্চ আদালতে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছিল। ‌সোমবার সেগুলির দ্রুত শুনানির আর্জি খারিজ করে দিয়েছে বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের সিঙ্গল বেঞ্চ। হাইকোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এখনই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করা হবে না। ফলে গোটা বিষয়টিতে আর কোনও বাধা রইল না বলে মনে করা হচ্ছে। 

    এদিনের শুনানিতে প্রথমে বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম। বলেন, ‘২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করেছে সুপ্রিম কোর্ট। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসএসসি-র নয়া বিজ্ঞপ্তিতে অনেক বিধিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এটি ২০১৬ সালের বিজ্ঞপ্তির অনুরূপ নয়। নতুন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নিয়ম বদল হলে, বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের সুযোগ আরও কমে যাবে।’ কিন্তু বিচারপতি ভট্টাচার্য জানান, এসএসসির নতুন বিজ্ঞপ্তি নিয়ে এখনই হস্তক্ষেপ করবে না হাইকোর্ট। আপাতত নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বাভাবিক ভাবে চলতে দেওয়া হবে। এর মধ্যে ফের কোনও অসুবিধা বা সমস্যা তৈরি হলে তখন আদালত বিষয়টি দেখবে। আগামী জুলাই মাসে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। 

    গত মাসের শেষে, শীর্ষ আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল এসএসসি। তাতে পরীক্ষার বিধিতেও নানা বদল আনা হয়। গ্রীষ্মাবকাশকালীন বেঞ্চের অনুমতিক্রমে সেই বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে একাধিক মামলা দায়ের করেন বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ। তাদের দাবি, নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিধি ২০১৬ সালের অনুরূপ হতে হবে। ২০২৫ সালের নিরিখে ন’বছর আগের নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিধি নির্ধারণ করা অযৌক্তিক। যেমন, ২০১৬ সালে ৫৫ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হতো। সেখানে বিজ্ঞপ্তিতে ৬০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও চাকরিপ্রার্থীদের যোগ্যতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা এবং ‘লেকচার ডেমনস্ট্রেশন’-এর উপরেও থাকছে নির্দিষ্ট নম্বর। ফলে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে যারা ওয়েটিং লিস্টে ছিলেন, তাঁরা যোগ্যতার দৌড়ে পিছিয়ে পড়বেন বলে আশঙ্কা। এছাড়াও একাধিক কারণ মামলার নথিতে উল্লেখ করা হয়। নতুন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবি জানান মামলাকারীরা। কিন্তু সেই মামলার দ্রুত শুনানির আর্জি খারিজ হয়ে গেল হাইকোর্টে। 

    যদিও প্রাথমিকে ২০২২ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এনআইওএস থেকে ‘ডিএলএড’ উত্তীর্ণদের মামলায় জরুরি ভিত্তিতে শুনানি হবে। সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওপেন স্কুলিং বা এনআইওএস থেকে প্রাপ্ত ‘ডিএলএড’ বৈধ ডিগ্রি। কিন্তু রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ প্রথমে তাঁদের বৈধতা দেয়নি। শেষপর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সেই বৈধতা মেলে। অথচ চলতি বছরের ৩০ মে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ ২০২২ সালের নিয়োগের যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, সেখানে শুধু শীর্ষ আদালতে মামলাকারীদের নাম সুযোগ পাওয়ার তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন অন্তত ৮০ জন চাকরিপ্রার্থী। মোট ন’টি মামলা দায়ের হয়েছে। আগামী ১২ জুন তার পরবর্তী শুনানি হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)