ফি বছর বাড়ছে ভিড়, পানিহাটির দণ্ড মহোৎসবে দুর্গাপুজোর মতো জনপ্লাবন
বর্তমান | ১০ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: দণ্ড অর্থাৎ শাসন বা শাস্তি। কিন্তু সেই দণ্ড যদি গুরুর কৃপা হয়? তাহলে সেই কৃপাদণ্ডের স্বাদ পেতে আকুল হয় ভক্ত। ৫০৯ বছর আগে তেমনই এক কৃপাদণ্ডকে ঘিরে আজও বৈষ্ণব আবেগের বিস্ফোরণ ঘটে পানিহাটিতে। সোমবার গঙ্গার পাড়ে মহোৎসবতলা ঘাটে লাখো বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মানুষের আবেগে ভাসল চৈতন্যদেব ও নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর লীলাভূমি পানিহাটি। গঙ্গায় পূণ্যস্নানের পর চিঁড়ে, দই, গুড়, কলা, কাঁঠাল সহযোগে ভক্তরা মাতেন মহোৎসবে।
পানিহাটির মহোৎসবতলা ঘাটে দণ্ড মহোৎসব প্রায় ৫০৯ বছরের পুরনো। ঘাট লাগোয়া বাড়ি রাঘব পণ্ডিতের। সে বাড়িতে আসতেন চৈতন্য ও নিত্যানন্দ। সে সময় হুগলির সপ্তগ্রামের জমিদারের পুত্র রঘুনাথ দাস দীক্ষা নিতে গিয়েছিলেন চৈতন্য মহাপ্রভুর কাছে। চৈতন্য পানিহাটিতে তাঁর শিষ্য নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর কাছে পাঠিয়েছিলেন রঘুনাথকে। সেদিন মহোৎসবতলা ঘাটে ভক্তদের নিয়ে বসেছিলেন নিত্যানন্দ। পৌঁছন রঘুনাথ। নিত্যানন্দ রঘুনাথকে দেখে কপট অবজ্ঞার ছল করেন। চৈতন্য মহাপ্রভুর কাছে যাওয়ার জন্য সবার সামনে ছদ্ম রাগও দেখান। তারপর মজার ছলে দণ্ড দেওয়ার ঘোষণা করেন। হরিনামে মত্ত হয়ে নিত্যানন্দ এরপর বলেন, ‘উপস্থিত সকল ভক্তকে দই, চিঁড়ে খাওয়াতে হবে।’ প্রভুর দেওয়া দণ্ড পেয়ে পরমানন্দে ভেসে গিয়েছিলেন রঘুনাথ। দণ্ড গ্রহণ করে ভক্তদের দই, চিঁড়ে, গুড় সহ মরসুমি ফল খাওয়ান। সেই শুরু। তারপর প্রতিবছর আয়োজন হয় দণ্ড মহোৎসবের।
সোমবারও ভোর রাত থেকে মহোৎসবতলা গঙ্গার ঘাট থেকে মানুষের দীর্ঘ লাইন। ভোর চারটের সময় মঙ্গল আরতির পর গঙ্গার পাড়ে থাকা মহাপ্রভু শ্রী মন্দিরের দরজা ভক্তদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তারপর বেলা যত গড়িয়েছে অসহনীয় গরম বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু তা উপেক্ষা করেই ভক্তদের ঢল উপচে পড়ে মন্দিরে। স্বস্তি দিতে দমকল ফোয়ারার মতো জল ছিটিয়ে ভিজিয়েছে সবাইকে। পানিহাটি শ্মশানঘাট থেকে মহোৎসবতলা ঘাট, ইসকন মন্দির ও রাঘব ভবন জনপ্লাবনে কার্যত ভেসে যায়। বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের তরফে গঙ্গার পাড়ের জায়গায় জায়গায় হরিনাম গানের আসর বসে। ভক্তদের প্রসাদ বিলি করা হয়।
২০২২ সালে এই উৎসবে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছিল। সে কথা মাথায় রেখে এদিন পুলিসি নিরাপত্তা ছিল কড়া। গঙ্গার সব ঘাট কোমর সমান জল থেকে বাঁশ দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। প্রতি ঘাটে নৌকা ও স্পিড বোট মজুত ছিল। গঙ্গায় দিনভর পুলিস লঞ্চ নিয়ে টহল দেয়। মোতায়েন ছিল বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর। আধিকারিক ও কর্মী মিলিয়ে আটশো পুলিস ছিল নিরাপত্তার দায়িত্বে। উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক নির্মল ঘোষ, প্রশাসন ও পুরসভার প্রতিনিধিরা। শ্রী শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু শ্রী মন্দিরের প্রধান সেবাইত বঙ্কুবিহারী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘প্রতিবছর ভিড় বাড়ছে। বিদেশ থেকেও ভক্তরা আসছেন।’
পানিহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান সোমনাথ দে বলেন, ‘ভক্তদের সুবিধার্থে পুরসভা সমস্ত রকম পরিকাঠামো তৈরি করেছিল। প্যান্ডেল, আলো, ভক্তদের খাওয়ানো, সিসি ক্যামেরা, মেডিক্যাল ক্যাম্প সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল।’