• হাতে হাত মিলিয়ে সেতু বানালেন গ্রামবাসীরা
    এই সময় | ১০ জুন ২০২৫
  • সঞ্চিতা মুখোপাধ্যায়, পুরুলিয়া

    বার বার আবেদন-নিবেদন করে হয়নি কোনও লাভ। তাই এ বার নিজেরাই স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে সেতু তৈরি করলেন গ্রামবাসী। তাঁদের বক্তব্য, বর্ষা শুরু হয়ে গেলে কাজ করা মুশকিল হয়ে যাবে। ৬ কিলোমিটার বেশি রাস্তা ঘুরে যাতে যাতায়াত না-করতে হয়, সে জন্য বাঁশ এবং কাঠ দিয়েই আপাতত করা হচ্ছে সেতু।

    এই ছবি পুরুলিয়ার ঝালদা-২ ব্লকের বামনিয়া বেলাডি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বরুয়াকোচা এলাকার। শালদহ নদীর উপরে এই সেতু নির্মাণ করার জন্য হাত লাগিয়েছেন এলাকার মানুষ।

    হাত না-লাগিয়েও উপায় নেই! নদীর উপরে সেতু না-থাকায় বর্ষা নামলেই বরুয়াকোচা, পটমাডি, নওয়াগোর-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা বেগুনকোদর, চাতমবাড়ি হাই স্কুল ও কোটশিলা বাজার-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে গিয়ে প্রবল বিড়ম্বনার মুখে পড়েন।

    সব থেকে বেশি সমস্যা হয় ছাত্রছাত্রীদের। বর্ষা নামা মানেই যে তাদের স্বাভাবিক পড়াশোনার ছন্দ কেটে যায়। এলাকার বাসিন্দা দারিক সিং মুড়া, সন্তোষী মুর্মুরা বলছেন, ‘বিকল্প যে রাস্তা রয়েছে, সেটা ব্যবহার করতে গেলে আমাদের অন্তত ছ’কিলোমিটার বেশি ঘুরতে হয়। অনেক বেশি সময় লেগে যায়।’

    বছরের অন্য সমেয় নদীতে জল কম থাকায় পারাপার করার কাজটা অনেক সহজ থাকে। বর্ষায় তা অসম্ভব। বাধ্য হয়ে বরুয়াকোচা এলাকার মানুষকে বাড়তি ছ’কিলোমিটার রাস্তা পার হয়ে পৌঁছতে হয় গন্তব্যে।

    সমস্যা সমাধানের জন্য দরকার ছিল মাত্র একটা সেতুর! কিন্তু সেটা আজ পর্যন্ত হয়ে উঠল না! অসহায় গ্রামবাসীরা তার জায়গায় নানা জায়গায় আবেদন করেছেন। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই তো মেলেনি।

    ফলে তাঁরা ঠিক করেছেন, আর অনুরোধ করার প্রয়োজন নেই। নিজেরাই হাতে হাত মিলিয়ে তৈরি করবেন সেতু। তাই গাছের গুঁড়ি, বাঁশ এবং পেরেক দিয়ে গ্রামবাসীরা সেতু তৈরির কাজে নেমেছেন। এতে অন্তত বর্ষার সময়ে স্বস্তি মিলবে, সোজা পথেই গন্তব্যে পৌঁছনো যাবে বলে দাবি তাঁদের।

    এ বিষয়ে কংগ্রেস পরিচালিত বামনিয়া বেলাডি পঞ্চায়েতের প্রধান পরী কৈবর্তের ব্যাখ্যা, ‘সেতু নিয়ে সমস্যার কথা শুনেছি। কিন্তু পঞ্চায়েত থেকে এত বড় সেতু তৈরি করা সম্ভব নয়। তাই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনব, যাতে ওই এলাকার মানুষের সমস্যার সমাধান হয়।’

    ঝালদা-২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি চিত্তরঞ্জন মাহাতো বর্তমান পঞ্চায়েত প্রশাসনের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘দীর্ঘ দিন ধরেই এই পঞ্চায়েত বিরোধীদের দখলে রয়েছে। ফলে উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। তবে যাতে ওই গ্রামের মানুষ একটু স্বস্তি পান, তার ব্যবস্থা করা হবে। দ্রুত এই সেতু তৈরির দাবি যাতে পূরণ হয়, তার জন্য সমস্ত চেষ্টা করা হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)