সুপ্রকাশ চক্রবর্তী, হাওড়া
হাওড়ার কোনা এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে কলকাতা ও ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের মধ্যে যাঁরা চলাচল করেন, তাঁদের প্রায়ই সাঁতরাগাছি ব্রিজের যানজটের কবলে পড়তে হয়। কোনা এক্সপ্রেসওয়ে যতটা চওড়া, তার থেকেও অনেক ছোট দক্ষিণ-পূর্ব রেল লাইনের উপর দিয়ে যাওয়া এই সড়কসেতু সাঁতরাগাছি ব্রিজ।
স্বাভাবিক ভাবেই এই সেতুর উপরে দ্বিমুখী যান চলাচলের ফলে, মাঝেমধ্যেই দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। কলকাতা বন্দর থেকে যে কোনও জিনিস বিদ্যাসাগর সেতু হয়ে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের মাধ্যমে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ে।
এর পাশাপাশি, কলকাতা থেকে ডানকুনি বা খড়্গপুরগামী পথে যোগাযোগ করতে হলেও মূলত এই সেতুটি ব্যবহার করেই বেশিরভাগ মানুষ যাতায়াত করেন। তার উপর হাওড়া স্টেশনের চাপ কমাতে সাঁতরাগাছি স্টেশনকে আন্তর্জাতিক মানের টার্মিনাল স্টেশন হিসেবে গড়ে তুলছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল।
ইতিমধ্যেই সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে বহু দূরপাল্লার ট্রেন ছাড়তে শুরু করেছে। স্বাভাবিক ভাবেই, সাঁতরাগাছি ব্রিজের গুরুত্ব সব থেকে বেশি। কারণ, এই ব্রিজটি কোনও ভাবে ভেঙে গেলে, কলকাতা শহরের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগ অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
বিকল্প হিসেবে বালির ব্রিজ বা আন্দুল রোড হয়ে জাতীয় সড়কে হয়তো যাওয়া যায়, কিন্তু তা অনেকটা ঘুরপথ। তাই অন্যান্য রাস্তার তুলনায় কোনা এক্সপ্রেসওয়ের উপরে সাঁতরাগাছি ব্রিজকে কেন্দ্র করেই মূলত সব থেকে বেশি যান চলাচল করে।
এই যানজটের সমস্যা মেটাতে এবং যান নিয়ন্ত্রণে দ্রুততা আনতে কোনা এক্সপ্রেসওয়েকে ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের তকমা দিয়ে, এর সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে।
যানজট কমাতে এখন কোনা এক্সপ্রেসওয়ের উপরে ছ’লেনের এলিভেটেড করিডর তৈরির কাজ চলছে জোর কদমে। কলকাতা থেকে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর ট্রোল প্লাজ়া হয়ে, ফুটবল গেট থেকে গরফা খেজুরতলা পর্যন্ত সাত কিলোমিটার লম্বা ছয় লেনের এলিভেটেড করিডর তৈরি হচ্ছে।
পুরোনো সাঁতরাগাছি ব্রিজের উপর দিয়ে এই করিডর ধরে পৌঁছে যাওয়া যাবে ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কে। এলিভেটেড করিডরের একটি লিঙ্ক নামবে সাঁতরাগাছি স্টেশনে ও সাঁতরাগাছি বাসস্ট্যান্ডে। এখান থেকেই আন্ডারপাস ধরে কলকাতা কিংবা জাতীয় সড়কের দিকে যাওয়া যাবে।
এই এলিভেটেড করিডরের মধ্যেই থাকছে সাঁতরাগাছি ব্রিজের অংশ। কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ধরে কলকাতা থেকে জাতীয় সড়কের দিকে যাওয়ারর পথে, বর্তমান সাঁতরাগাছি ব্রিজের ডান দিকে যে ঝিল রয়েছে, সেই ঝিলের উপর দিয়েই যাবে এই করিডর।
তাই সেখানে ঝিলের কিছুটা অংশ বুজিয়ে, সেখানে তৈরি হচ্ছে আর একটি ফ্লাইওভার। যেটি এই এলিভেটেড করিডরেরই অংশ। ইতিমধ্যেই ঝিলের অংশে বড় বড় থাম তোলা শুরু হয়েছে। এখন কাজ হচ্ছে দ্রুত গতিতে।
সাঁতরাগাছি ব্রিজের পাশে এই বিকল্প এলিভেটেড করিডরের মধ্যে ব্রিজ তৈরি হলে, বর্তমান কোনা এক্সপ্রেসওয়ের উপরে চাপ যেমন কমবে, সাঁতরাগাছির পুরোনো ব্রিজের জায়গা সংকুলানের সমস্যাও মিটবে৷ এর ফলে যান চলাচল স্বাভাবিক হবে। এই ব্রিজ ও এলিভেটেড করিডর তৈরির কাজ শেষ হলে যানযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন সাধারণ মানুষ।