• গুন্ডা ‘পোষা’, ছল করে বাড়ি লিখিয়ে নেওয়া, একই অঙ্গে ফুলটুসির বহু রূপ...
    এই সময় | ১০ জুন ২০২৫
  • সোদপুর-কাণ্ডে উঠে এসেছে ফুলটুসি বেগম ওরফে শ্বেতা খানের নাম। তবে ক্রমেই পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মতো করে সামনে আসছে তাঁর কীর্তিকলাপ। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে প্রভাব খাটানোর মতো অভিযোগ তো প্রথম দিন থেকেই করে চলেছেন হাওড়ার বাঁকড়ার বাসিন্দারা। অভিযোগ উঠেছে, মা-ছেলে শ্বেতা ও আরিয়ানের বিরুদ্ধে ‘সফ্ট পর্ন’ ব্যবসা চালানোর। শ্বেতার কুকীর্তি সহ্য করতে না পেরে তাঁর কিশোরী মেয়ের আত্মহত্যা, প্রাক্তন স্বামীকে মারধরের অভিযোগ পর্যন্ত উঠেছে। এ বার সেই শ্বেতা ওরফে ‘ফুলটুসি ম্যাডাম’-এর বিরুদ্ধে গুলি চালানোর মতো অভিযোগ উঠছে।

    অভিযোগ, প্রোডাকশন হাউসের আড়ালে নীল ছবি নিয়ে কাজকর্ম চালাতেন শ্বেতা। সেই সূত্রে, বহুদূর গিয়েছে তাঁর হাত। হাতের তালুতে রাখতেন সমাজবিরোধীদের। পান থেকে চুন খসলেই গুন্ডাবাহিনী পাঠিয়ে দিতেন বলেও অভিযোগ।

    অভিযোগ, শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তি দখল করতে ভাড়া করা গুন্ডা এনেছিলেন শ্বেতা। তাঁর উপস্থিতিতেই গুলি চালানো হয়। এলাকার লোকজন সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘ডেনজারার্স মহিলা। এলাকায় গুলিও চালিয়েছিলেন।’ তা হলে থানায় অভিযোগ হয়নি কেন?

    স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শ্বেতা একটাই প্রভাবশালী, পুলিশ-প্রশাসনও কিছুই করত না। উল্টে শ্বেতা এলাকার বহু ছেলেকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছিলেন।

    স্থানীয় সূত্রে খবর, ২০১৫ সালের ঘটনা। আগ্নেয়াস্ত্র সমেত গ্রেপ্তার হয়েছিলেন শ্বেতা। যদিও তখনও বাজারে তাঁর শ্বেতা নামের পরিচিতি হয়নি। তাঁর লাস্যের ফোয়ারা তখনও এতটা ছিল না। মহসিনা বেগম নামে পরিচিত ছিলেন। পরিচিতরা ডাকতেন ফুলটুসি বলে।

    ফুলটুসিই সময়ের সঙ্গে রং-রূপ বদলে শ্বেতা খান হন। ফুলটুসির প্রাক্তন স্বামীর দাবি, মায়ের আদর্শ শিষ্য হয়ে ওঠে ছেলে আরিয়ান। মেয়ে পারেনি, আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

    বাঁকড়া ফকিরপাড়া এলাকার পাশে জমাদার পাড়া। সেখানকার এক পরিবারের গৃহকর্তা নূর আলম জানান, ২০২৩ সালে তাঁর স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সে সময়ে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য শ্বেতার কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা ধার নেন। ১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে সেই টাকার অঙ্ক ধার দেওয়া হচ্ছে বলে লেখা থাকলেও, সঙ্গে সুদ হিসাবে ১ লক্ষ টাকার উল্লেখ করা হয়।

    এক বছর পেরিয়ে গেলেও নূর সেই টাকা শোধ করতে না পারায় গুন্ডা পাঠানো হয়েছিল নূরের বাড়িতে। নূরের অভিযোগ, বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দেয় গুন্ডাবাহিনী। এমনকী শ্বেতা নূরের পরিবারকে জানায়, ওই বাড়ি নূর তাঁর কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। শ্বেতা টাকা ধার দেওয়ার নামে ছল করে বাড়িটাই লিখিয়ে নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ নূরের।

    সেই ফুলটুসি ওরফে শ্বেতা ও আরিয়ানের নাম জড়ায় সোদপুরের এক তরুণীকে প্রায় ৬ মাস আটকে রেখে নির্যাতনের। কোনও মতে পালিয়ে এসে খড়দহ থানায় শ্বেতা ও আরিয়ানের নামে অভিযোগ দায়ের করেন ওই তরুণী। এর পরই শল্কমোচন শুরু শ্বেতার কীর্তির।

    সোদপুরের নির্যাতিতাকে মারধর করে চুল কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল শ্বেতা খান, আরিয়ান খানের বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে মঙ্গলবার বাঁকড়া ফকিরপাড়ায় শ্বেতার ফ্ল্যাটের পিছন দিক থেকে মাথার চুল উদ্ধার করে পুলিশ। এই চুল সোদপুরের তরুণীর কি না তা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

  • Link to this news (এই সময়)