নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: দলীয় কাজে পারদর্শী নয়। বরং দিলীপ ঘনিষ্ঠ হলেই বুথ কমিটিতে জায়গা। মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপির বুথ কমিটি গঠন নিয়ে এমনই অভিযোগ বিজেপির দলীয় নেতৃত্বের একাংশের। আর এতেই ক্ষোভে ফুঁসছে কর্মী সমর্থকরা। তাঁদের অভিযোগ, মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলাজুড়ে বিজেপির বুথ কমিটি গঠন শুরু হয়েছে। কিন্তু সেই কমিটি গঠনে স্বজনপোষণ করেছেন জেলা নেতৃত্বের একাংশ। সেই কমিটিতে দিলীপ ঘনিষ্ঠরাই পদ পাচ্ছেন। এরফলে দিলীপ বিরোধী গোষ্ঠীর নেতারা সাংগঠনিক পদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এমনকী বুথ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ফেস ভ্যালুকেও সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। যদিও দিলীপ ঘনিষ্ঠ নেতাদের মতে, আমার বুথ সবচেয়ে মজবুত ও বুথ জিতলেই নির্বাচন জিতব— এই মন্ত্রকে সামনে রেখেই সংগঠন মজবুত করার চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যেই ৫০ শতাংশ বুথ কমিটি গঠিত হয়েছে। দলে পুরনো নেতাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এরফলে বুথস্তরে বিজেপির নেতাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।
বিজেপির নেতাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যেই রাজ্য বিজেপির তরফে বিশেষ নির্দেশকা দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশিকা অনুসারে, ৭ জুন থেকে ১১ জুনের মধ্যে বিভিন্ন মণ্ডল স্তরের কর্মশালা সম্পন্ন করতে হবে। প্রতিটি শক্তি কেন্দ্র প্রমুখকে বুথগুলির সভাপতিদের নাম ও এগারো জন সদস্যের ফোন নম্বর সহ তথ্য সংগ্রহ করে রাখতে হবে। এছাড়া ১২ জুন থেকে ২০ জুনের মধ্যে অবশিষ্ট বুথ কমিটি গঠন করতে হবে। পাশাপাশি ২১ জুন থেকে ২৭ জুনের মধ্যে বুথ কমিটি গঠনের নথি মণ্ডল স্তর থেকে সংগ্রহ করে জেলায় জমা নেওয়া হবে। অপরদিকে, প্রদেশ থেকে ইতিমধ্যে একটি লিঙ্ক জেলায় পাঠানো হয়েছে। সেই লিঙ্কে জেলা নেতৃত্ব, মণ্ডল নেতৃত্ব, মোর্চা, সেল নেতৃত্বরা ভোটের কার্ডের দু’ দিকের ছবি সহ তথ্য আপলোড করবে। জেলা বিজেপির সভাপতি শমিতকুমার মণ্ডল বলেন, জোরকদমে বুথ কমিটি গঠন চলছে। দলের সংগঠন মজবুত করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আগামী নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য আমরা প্রস্তুত।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছরে বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা বারংবার প্রকাশ্যে এসেছে। ফলস্বরূপ একের পর এক নির্বাচনে হেরেছে গেরুয়া বাহিনী। গত বিধানসভা নির্বাচনের পর পঞ্চায়েত ভোটে তো বটেই, লোকসভা ভোটেও বিজেপির জেতা সিট হাতছাড়া হয়েছে। বারংবার নির্বাচনে পিছিয়ে যাওয়ায় মানসিকভাবে হতাশ কর্মী-সমর্থকরা। ঠিক কোন মন্ত্রে তৃণমূলের সঙ্গে লড়াইয়ে জয় আসবে তা বুঝেই উঠতে পারছেন না নেতারা। তারমধ্যে উচ্চ নেতৃত্বের একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তের জেরে কর্মীরা দিশেহারা। জানা গিয়েছে, মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বেছে নেওয়ার পর থেকে দলটি আড়াআড়ি দু’ ভাগে বিভক্ত হয়েছে। যে কোনও সিদ্ধান্তে দলের নিচুতলার কর্মীদের মতটুকু নেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ। পাশাপাশি এখনও পর্যন্ত জেলা কমিটি গঠন না হওয়ায় ক্ষুব্ধ জেলা নেতৃত্বের একাংশ।
বিজেপির এক নেতা বলেন, জেলায় ১ হাজার ৯০০টির বেশি বুথ রয়েছে। সেই বুথের কমিটি গঠন করতেও স্থানীয় নেতাদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে না। অনেকেই সারা বছর সাংগঠনিক কর্মসূচিতে না থেকেও পদ পাচ্ছেন। তাঁরা সকলেই দিলীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠ। তবে বেশকিছু বুথে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। সেই সিদ্ধান্তের ফলে দলীয় কাঠামো মজবুত হবে। কিন্তু দল ক্ষমতায় আসার আগেই চরম পর্যায়ে গোষ্ঠী কোন্দল শুরু হয়েছে। যা আগামী নির্বাচনগুলোতে প্রভাব ফেলতে পারে। এই নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না তৃণমূল নেতৃত্ব।
জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ রফিক বলেন, দলটাই তো আর থাকবে না। বুথ কমিটি করে কী হবে। যাঁরা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করেন, তাঁদের আবার যোগ্য জবাব দেবে মানুষ।