রিকশ চালাতে হতে হবে স্থানীয় ভোটার, ‘ফতোয়া’র পরই তালিকায় নাম তুলতে হুড়োহুড়ি দক্ষিণ দমদমে
বর্তমান | ১১ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: দমদম অঞ্চলের ভোটার না হলে এই বিধানসভা এলাকায় রিকশ চালানো যাবে না। এরকম একটি ফতোয়া জারি হয়েছে দক্ষিণ দমদমে। তারপর দেখা গিয়েছে, এখানকার ভোটার নন এমন বহু রিকশ চালক এই এলাকার ভোটার হতে আবেদন জানানো শুরু করেছেন। সে কাজে চালকদের সহযোগিতা করছে তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব। এই ইস্যুতে তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক বিতর্ক। বিরোধী দলগুলির বক্তব্য, সমর্থন কমছে। তাই বহিরাগতদের ভোটার বানিয়ে বৈতরণী পারের চেষ্টা করছে তৃণমূল। যদিও রাজ্যের শাসকদলের নেতাদের দাবি, সাধারণ মানুষের স্বার্থে এলাকায় রিকশ নিয়ন্ত্রণের জন্য এই সিদ্ধান্ত।
সম্প্রতি, দক্ষিণ দমদম পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার এবং দক্ষিণ দমদম শহর তৃণমূলের সভাপতি (দমদম বিধানসভা) সুকান্ত সেনশর্মা (রাজু) রিকশ সংক্রান্ত এই নয়া নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘দমদম বিধানসভা এলাকার ভোটার নন এমন কোনও মানুষ এলাকায় রিকশ চালাতে পারবেন না। এই একই ব্যবস্থা পাশের ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডেও চালু হয়েছে।’ এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় দমদম এমসি গার্ডেন রোড মেইন রিকশ ইউনিয়নের সদস্য এক চালক আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। এরপর সুকান্তবাবু সমাধান সূত্র দেন, এই এলাকায় ভোটার কার্ড স্থানান্তর করলে রিকশ চালানো যাবে। কাউন্সিলার অফিস থেকে এ বিষয়ে সহযোগিতাও করা হবে।
ফতোয়ার কথা প্রকাশ্যে আসার পর শহরের বাসিন্দারা বলছেন, ‘রিকশর মতো অটো ও টোটোর ক্ষেত্রেও কি একই নিয়ম? কিছু ব্যক্তি একাধিক গাড়ি কিনে তা ভাড়ায় খাটান। সেই রিকশ, অটো ও টোটো দৈনিক ভাড়ার হিসেবে নিয়ে বহিরাগত চালকরা এ শহরে চালান। তাহলে কোপ শুধুমাত্র রিকশ চালকদের উপরই কেন পড়বে? বহিরাগত অটো, টোটো চালকদেরও কি দক্ষিণ দমদমের ভোটার করা হবে? পাশাপাশি দমদম রোডে রোজ সব্জি ও মাছের দোকান দেন বহু ব্যবসায়ী। তাঁরা উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দা। সেই সব দোকানের জন্যও যানজট হয়। এই দোকানদারদেরও কি দমদমের ভোটার করা হবে?’
দক্ষিণ দমদমের বিজেপি নেতা গৌতম সাহা মণ্ডল বলেন, ‘শহরের মানুষ এঁদের পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি ও অহংকারে তিতিবিরক্ত। তাই ভোটের আগে সে কথা বুঝে নতুন ভোট ব্যাঙ্কের লক্ষ্যে এসব করা হচ্ছে।’ সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য শৈলেন মাঁকড় বলেন, ‘সিন্ডিকেট রাজ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। ভোট ব্যাঙ্কের স্বার্থে এসব করা হচ্ছে।’ যদিও সুকান্ত সেনশর্মা বলেন, ‘মানুষের স্বার্থে শহরে রিকশ, অটো ও টোটো নিয়ন্ত্রণ জরুরি। যারা পাঁচ বছরের বেশি রিকশ চালাচ্ছেন ও এখানে ভাড়ায় থাকেন তাঁদের এখানকার ভোটার হওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। যারা নতুন চালাচ্ছেন তাঁদেরও বলা হয়েছে এলাকার ভোটার না হলে রিকশ চালাতে পারবেন না। কেউ ভোটার কার্ড স্থানান্তরের জন্য সহযোগিতা চাইলে তা করা হচ্ছে। বিরোধীরা স্রেফ বিরোধিতার জন্য এসব বলছেন।’