ভবঘুরে- ফুটপাতবাসীদের তল্পিতল্পা সরানো হলেও নাইট শেল্টারে যেতে রাজি নয় কেউ
বর্তমান | ১১ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ভবঘুরে ও ফুটপাতবাসীদের সরাতে মঙ্গলবার স্থানীয় থানার পুলিসকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালাল কলকাতা পুরসভা। এদিন শহরের চারটি এলাকায় এই অভিযান হয়। মল্লিকবাজার, বালিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে গড়িয়াহাট, হাজরা মোড় থেকে গোপালনগর এবং পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্ট ক্রসিং থেকে বেকবাগান—এই চার জায়গা থেকে ভবঘুরে এবং ফুটপাতবাসীদের সরিয়ে রাস্তা, ফুটপাত এবং ব্রিজের নীচের অংশ খালি করার তোড়জোড় চলে। এসব জায়গায় রীতিমতো সংসার পেতে বসেছিল ফুটপাতবাসী ও ভবঘুরেরা। তাদের জিনিসপত্র তুলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হলেও সরানো যায়নি ফুটপাতবাসীদের।
পুরসভার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মল্লিকবাজারে চারজন ফুটপাতবাসীকে চিহ্নিত করা গেলেও মাত্র একজনকে নাইট শেল্টারে পাঠানো গিয়েছে। বাকিরা কেউ যেতে চায়নি। হাজরা, গোপালনগর, গড়িয়াহাট, বালিগঞ্জ ফাঁড়ি অঞ্চল থেকে ভবঘুরেদের লোটাকম্বল সরানো গেলেও তাঁদের নাইট শেল্টারে নিয়ে যাওয়া যায়নি। কেউ কেউ আবার পালিয়েও গিয়েছে। কারও কারও সঙ্গে পুলিস ও পুরসভার টিমের ঝামেলা বাধে। পুরসভার এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘পুলিসের তরফে জানানো হয়েছে, এদের তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করা যায়নি একদিনের নোটিসে। জোরদার প্রস্তুতি নিয়ে ফের অভিযান চালানো হবে।’ আগামী দিনে ভবঘুরেদের সরিয়ে এলাকা খালি করতে এবং নতুন করে কেউ যাতে ফুটপাতে সংসার পাততে না পারে, তা নিশ্চিত করতে পুলিসি নজরদারি আরও কড়া হওয়া দরকার বলে মনে করে পুরসভা। এই মর্মে পুলিস কমিশনারকে এদিন ফের চিঠি পাঠিয়েছেন পুর-কমিশনার।
এদিকে, কাল বৃহস্পতিবার শহরের বিভিন্ন উড়ালপুল পরিদর্শনে বেরবে যৌথ টিম। কলকাতা পুরসভা, লালবাজারের পাশাপাশি ওই টিমে থাকবেন এইচআরবিসি, কেএমডিএ’র আধিকারিকরা। এক পুরকর্তা বলেন, ‘বিভিন্ন উড়ালপুলের নীচে বিমের গায়ে নানা বিজ্ঞাপনী হোর্ডিংয়ের পরিকাঠামো রয়েছে। অনেক জায়গায় ব্রিজের নীচে ফাঁকা জায়গায় ভবঘুরে, ফুটপাতবাসী দখল করে সংসার পেতেছে। তারা সেই সব বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং ছিঁড়ে দেয়। কোথাও কোথাও কাঠামো ভেঙে লোহা বিক্রি করে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ। তাই ওই জায়গাগুলি ঘুরে দেখা হবে। তারপর দখলদারদের সরিয়ে ব্রিজের নীচের অংশ ঘিরে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’
শহরের বিভিন্ন রাস্তা, যাত্রী প্রতীক্ষালয়, ফুটপাত, ব্রিজের নীচে ভবঘুরে বা ফুটপাতবাসীদের আস্তানা তৈরি হয়েছে। প্লাস্টিকের ছাউনি করে চলছে বসবাস। রাস্তার উপরেই চলছে রান্নাবান্না। এসব জায়গায় অসামাজিক কাজকর্মও হয়। তাছাড়া, এসব জায়গায় অনেক সময় চোর, পকেটমাররা ঘাপটি মেরে থাকে বলে অভিযোগ। তাই এসব জায়গা খালি করে ভবঘুরে এবং ফুটপাতবাসীদের নাইট শেল্টারে পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা।