নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: পাক অধিকৃত কাশ্মীর ফিরিয়ে আনার সুবর্ণ সুযোগ হারিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। পহেলগাঁও হামলার পর প্রত্যাঘাতের যে পথ ভারত নিয়েছিল, তাতে সেনাবাহিনীর কাছে এই কাজ খুব কঠিন হতো না। কিন্তু কেন্দ্রের ‘অজ্ঞাত’ নীতির কারণেই পিছু হটতে হয়েছে ভারতকে। মোদি সরকারের এই ব্যর্থতাকেই বিধানসভায় বেআব্রু করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘এবারই তো সুযোগ ছিল! পাক অধিকৃত কাশ্মীর আমরা ফেরত আনতে পারতাম। কিন্তু কেন করা হল না? এর উত্তর চাইব না? আমেরিকা, আর বিশ্বব্যাঙ্কের থেকে ঋণ পাকিস্তান পেল কীভাবে? কেন্দ্রীয় সরকারের নিজেদের মধ্যে কোনও কমিউনিকেশন গ্যাপের জন্য বহিরাগত শক্তি ঢুকে যাচ্ছে না তো? রাষ্ট্রসঙ্ঘের কমিটিতে কেন পাকিস্তানকে রাখা হয়েছে?’
গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে জঙ্গিদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৬ জন নিরাপরাধ মানুষ। তারপরই সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর পাকিস্তানকে একঘরে করার আওয়াজ ওঠে বিশ্বজুড়ে। ভারতীয় বাহিনীর ‘অপারেশন সিন্দুর’ গুঁড়িয়ে দেয় একের পর এক পাকিস্তানি জঙ্গি ঘাঁটি। এই প্রেক্ষাপটেই মঙ্গলবার বিধানসভার অধিবেশনে ভারতীয় বাহিনীর বিক্রমের কথা তুলে ধরে স্যালুট জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় সেনা বাহিনীকে কুর্নিশ জানিয়ে একটি প্রস্তাব আনেন। তার উপর আলোচনায় অংশ নেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার বক্তব্যের সময় প্রতিটি ছত্রে সেনার লড়াই-সংগ্রামের কথা উঠে আসে। দেশের সুরক্ষায় সেনাবাহিনীর আত্মত্যাগকে কুর্নিশ জানান মুখ্যমন্ত্রী। শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন শহিদ বীর জওয়ানদের প্রতি। তবে এরই পাশাপাশি, সুরক্ষা বলয় নিয়ে কেন্দ্রীয় নীতির প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদি সরকারের ফাঁক-ফোঁকরও এদিন দেখিয়ে দিয়েছেন বাংলার অগ্নিকন্যা। সাফ বুঝিয়ে দিয়েছেন, নরেন্দ্র মোদি ব্যর্থ। প্রত্যাঘাত এবং নাগরিক সুরক্ষার যে আশা তাঁর উপর করা হয়েছিল, তা পূরণ করতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকার। দিল্লির প্রতি তাঁর ইঙ্গিতবহ প্রশ্ন, ভোটের আগে আবার একটা পুলওয়ামার মতো ঘটনা ঘটবে না তো?
‘অপারেশন সিন্দুর’কে কেন্দ্র করে প্রচারের জোয়ারে ভারতীয় সেনার কৃতিত্বই পিছনের সারিতে চলে গিয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। উল্টে এই ইস্যুকে মোদি-শাহ ভোটের ‘মার্কেটিং’য়ে কাজে লাগাচ্ছেন বলে দাবি তৃণমূল সহ বিরোধীদের। আক্রমণের সেই ঝাঁঝ এদিনও বজায় ছিল মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে। বিধানসভায় তিনি বলেন, পহেলগাঁওয়ের ঘটনা কেন্দ্রীয় নিরাপত্তার ব্যর্থতার অন্যতম উদাহারণ। ইন্টেলিজেন্স ফেলিওর। কেন খবর ছিল না গোয়েন্দাদের কাছে? জঙ্গিরা এসে সাধারণ মানুষকে মেরে চলে গেল... কতজন ধরা পড়েছে? ওখানে যখন লোকে বিপদে পড়ে সাহায্য চাইছিল, তখন কেন পুলিস ছিল না? কেন পুঞ্চ, রাজৌরিতে গেলেন না প্রধানমন্ত্রী?’ পর্যটক ও কাশ্মীরের স্থানীয়দের নিরাপত্তা দিতে না পারার জন্য সামগ্রিক ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে বিজেপি শিবিরের উদ্দেশে মমতার তীর্যক মন্তব্য, ‘আপনাদের পদত্যাগ করা উচিত। অপদার্থ বিজেপি, দেশের সর্বনাশ। লজ্জা! ধিক্কার! বিদেশ নীতিতে ব্যর্থ কেন্দ্র। যেটা ওদের করার কথা ছিল, সেটা বিরোধী দলগুলি করেছে।’
এদিন বিধানসভায় মমতা যখন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছেন, তখন সরব হতে থাকেন বিজেপি বিধায়করা। ‘অপারেশন সিন্দুর’ এবং মোদির নামে জয়ধ্বনি দিতে থাকেন তাঁরা। তৃণমূল বিধায়করাও পাল্টা ‘মমতা’ ও ‘দিদি’ স্লোগান তোলেন। ফলে তৃণমূল-বিজেপির তরজায় সরগরম হয়ে বিধানসভার অধিবেশন কক্ষ। মমতা অবশ্য তাতেও থামেননি। কেন্দ্রকে নিশানায় রেখে বলেছেন, ‘দেশ সবার। দেশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে রাজনীতির বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে। কেন্দ্রীয় বাহিনী ও এজেন্সিগুলির আরও সক্রিয় হওয়ার প্রয়োজন আছে।’
এদিন বিরোধী দলনেতা সহ বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পলরা তাঁদের বক্তব্যে মোদি সরকারের প্রশাংসা করেন। পাল্টা রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, বীরবাহা হাঁসদারা তুলে ধরেন দেশকে অখণ্ড রাখা এবং সেনাবাহিনীর গর্বের কাহিনি। যদিও বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে অপ্রীতিকর মন্তব্যের অভিযোগ তুলে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস আনতে চলেছে তৃণমূল পরিষদীয় দল।