• ‘ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ নয়’ ওবিসি-ইস্যুতে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১১ জুন ২০২৫
  • ধর্মের ভিত্তিতে নয়, সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে প্রাধান্য পাচ্ছে পরিবারের আর্থিক পরিস্থিতি। মঙ্গলবার বিধানসভার বাদল অধিবেশনের প্রথমার্ধ্বে যোগ দিয়েই ওবিসি-ইস্যুতে স্পষ্ট বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের। অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি সংরক্ষণ সংক্রান্ত ইস্যু নিয়ে আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওবিসি তালিকা নির্ধারণের সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। আর্থিক অনগ্রসর শ্রেণির ভিত্তিতে সার্ভে হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে আমরা করে ফেলব। যাঁরা বলছেন, ধর্মের ভিত্তিতে এই সংরক্ষণ, তাঁরা আদতে বিভ্রান্ত করছেন! এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা।’

    যদিও মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য অসত্য বলে দাবি করে এদিন বিধানসভার কক্ষত্যাগ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ পরিষদীয় দলের সদস্যরা। তবে মুখ্যমন্ত্রীও তথ্য-পরিসংখ্যান পেশ করে জানান, ‘বর্তমানে এই রাজ্যে ১৪০টি ক্যাটাগরি রয়েছে। এর মধ্যে ৪৯ ওবিসি-এ এবং ৯১ ওবিসি-বি। আর‌ও ৫০টি ক্যাটাগরির জন্য সার্ভে করার কাজ চলছে। সিপিএমের আমলে কোনও সার্ভে করা হয়নি। আমাদের সময়ে, ২০১২ সাল থেকে এই সার্ভে করা হচ্ছে।’

    প্রসঙ্গত এদিন অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির শংসাপত্র সংক্রান্ত আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী বিস্তারিত জানান, ‘২০২৪-র ২২ মে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের এক রায়ে ওবিসি তালিকা থেকে ১১৩টি শ্রেণিকে বাদ দেওয়া হয়। পাশাপাশি ওবিসি-এ ও ওবিসি-বি সাব-ক্যাটাগরি বাতিল হয়। এর ফলে সংরক্ষণের হার ১৭ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়ায় মাত্র ৭ শতাংশে। এই সিদ্ধান্তে রাজ্যের বহু মানুষ সমস্যায় পড়েন। তাই রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানায়।’

    মুখ্যমন্ত্রী এদিন বিধানসভায় আরও জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারকে ওবিসি তালিকা নতুন করে তৈরি করার অনুমতি দেয় এবং তিন মাস সময়ও দেয়। এরপর প্রাক্তন বিচারপতি অসীম কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্য গঠন করে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ কমিশন। সেই কমিশন পুরনো বাতিল হওয়া ১১৩টি সহ মোট ১১৭টি শ্রেণির অন্তর্ভুক্তির জন্য কাজ শুরু করে। কমিশন বেঞ্চমার্ক সার্ভে করার সিদ্ধান্ত নেয়, যা বাস্তবায়ন করে ব্যুরো অফ অ্যাপ্লায়েড ইকোনমিক্স অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিক্স। এরপর হাইকোর্টের অনুমতি নিয়ে সেই তালিকার পাবলিক নোটিফিকেশন করা হয়, যা ব্লক স্তরে প্রচার করা হয়। পরে আরও ২৬টি শ্রেণি অন্তর্ভুক্তির আবেদন করে এবং কমিশন তাদের নিয়েও সার্ভে শুরু করে।

    উল্লেখ্য, ওবিসি সংরক্ষণের ব্যাপারে বিধানসভায় এদিন একটি স্ট্যাটাস রিপোর্টও পেশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের ৮ মে হাইকোর্টের রায়ে বাতিল না হওয়া ৬৬টি শ্রেণির মধ্যেও সাব-ক্যাটাগরি তৈরি করা হয়েছে। কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, ৮ মে একটি নতুন নোটিফিকেশন ইস্যু করে রাজ্য সরকার। ২৭ মে ৫১টি এবং ৩ জুন আরও ২৫টি শ্রেণিকে ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরিশেষে মুখ্যমন্ত্রী জানান, কলেজে ভর্তি এবং বিভিন্ন সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে নিয়োগের জন্য ওবিসি সার্টিফিকেট প্রদান শুরু হবে। বহু নিয়োগ বোর্ড এতদিন ভর্তি বন্ধ রেখেছিল। এখন সেই প্রক্রিয়াও চালু হবে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)