• POK-ও দখল করতে পারতাম, খেদ মমতার
    এই সময় | ১১ জুন ২০২৫
  • এই সময়: পহেলগামে জঙ্গিহানার পরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, শুধু জঙ্গিদের নয়, এ বার দমন করতে হবে তাদের মদতদাতাদের। আর পাকিস্তানকে মুখের মতো জবাব দিতে পাক অধিকৃত কাশ্মীর ছিনিয়ে নিতে হবে বলেও জানিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। ভারত–পাকিস্তান সাম্প্রতিক সংঘর্ষ বিরতির পরে একমাস কেটে গিয়েছে।

    ভারতীয় সেনাবাহিনী সীমান্তপারের জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিলেও নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর পুনরুদ্ধার করার সাহস দেখাতে পারেনি— এমনটাই মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তাঁর পর্যবেক্ষণ, কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার প্রমাণ গোটা দুনিয়া দেখলেও মোদী সরকারের কূটনৈতিক দুর্বলতার কারণেই পাকিস্তান আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার থেকে এখনও ঋণ পাচ্ছে। ভারতীয় সেনা সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিলেও পহেলগামে জঙ্গি হামলা ও ‘অপারেশন সিঁদুর’ পর্বে নরেন্দ্র মোদী সরকারের দুর্বলতা প্রকট হয়েছে বলে এ দিন বিধানসভায় মন্তব্য করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।

    ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে ভারতীয় সেনাকে কুর্নিশ জানিয়ে মঙ্গলবার বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের পেশ করা প্রস্তাবের উপরে বিশেষ আলোচনা হয়। পাকিস্তানকে ভারতীয় সেনা যে ভাবে শিক্ষা দিয়েছে, তাকে ‘সেলাম’ জানিয়ে মোদী সরকারের ভূমিকা নিয়ে এ দিন একের পর এক প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার কথায়, ‘পাকিস্তানকে শিক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। সেনাবাহিনীকে সেলাম জানাই।...পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে আমরা কিন্তু দখল নিতে পারতাম।’

    পাকিস্তানে ঘাঁটি গেড়ে থাকা সন্ত্রাসবাদকে সম্পূর্ণ নির্মূল করতে হলে পাক অধিকৃত কাশ্মীর পুনরুদ্ধার করা প্রয়োজন বলে সর্বদলীয় টিমের বিদেশ সফরে একাধিকবার মন্তব্য করেছেন অভিষেক। ভারতীয় সেনা যে পরাক্রমের সঙ্গে পরপর জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া শুরু করেছিলে, সেখানে মোদী সরকার যদি সাহস দেখাতে পারত তা হলে এ বারেই পাক অধিকৃত কাশ্মীরে তিরঙ্গা উড়ত বলে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব মনে করছেন।

    এই কারণে মমতা এ দিন বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের আরও স্ট্রং হওয়া উচিত ছিল।’ ভারতীয় সেনাবাহিনী জঙ্গি দমনে যে সাফল্য পেয়েছে, পাকিস্তানকে কোণঠাসা করেছে, সেখানে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে মোদী সরকারের পারফরম্যান্স উজ্জ্বল নয় বলে মমতার পর্যবেক্ষণ। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘পহেলগামের পরেও পাকিস্তান আইএমএফ, বিশ্বব্যাঙ্ক থেকে লোন পেল কী করে? আমরা কি যথেষ্ট কূটনৈতিক পদক্ষেপ করেছি? কোনও গ্যাপ হচ্ছে না তো?’

    এর জন্য মোদী সরকারের বিদেশমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্করের সমালোচনা অবশ্য করেননি মমতা। তবে তিনি মনে করছেন, আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় পাকিস্তানকে কোণঠাসা করার জন্য মোদী সরকারের যে কাজ করা উচিত ছিল, তা বিরোধীপক্ষ করেছে। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে বিদেশে যে সাতটি সর্বদলীয় টিম গিয়েছে, সেই টিমের সদস্যদের সঙ্গে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মোদী সাক্ষাৎ করেছেন। তার কয়েক ঘণ্টা আগে বিধানসভায় মোদীকে ইঙ্গিত করে মমতা বলেন, ‘আপনি নিজের প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। শুধু নিজের ছবি দিয়ে দেশ চলে না। আপনাদের যে কাজ করার কথা ছিল, তা বিরোধী দলগুলি করেছে। বিদেশে কেন্দ্রের মন্ত্রীদের পাঠানো উচিত ছিল।’

    যদিও বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আর্মি, এয়ারফোর্স ও নৌসেনাকে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় অভিযান চালানোর পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। পাকিস্তানের একশো কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মাসুদ আজ়হারের বংশ র্নিবংশ করেছে সেনা। অপারেশন সিঁদুর এখনও শেষ হয়নি। সিন্ধু জলচুক্তিও বাতিল হয়ে রয়েছে।’ মুম্বই হামলার পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সরকার এই সাহস দেখাতে পারেনি বলে বিজেপির অভিযোগ। মনমোহনের ইউপিএ–২ সরকারে মমতা মন্ত্রী ছিলেন বলেও এ দিন কটাক্ষ করেছেন অগ্নিমিত্রা পলের মতো বিজেপি বিধায়করা।

    গেরুয়া শিবিরের এই কটাক্ষের পাল্টা পহেলগামে পর্যটকদের সুরক্ষা দিতে মোদী–শাহের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার কথায়, ‘জম্মু–কাশ্মীরে কয়েক লক্ষ সেনা রয়েছে। বিএসএফ রয়েছে। কিন্তু যেখানে এত পর্যটক রয়েছেন, সেখানে একজনও পুলিশ কেন ছিল না? কোথা থেকে জঙ্গিরা এল? আজ পর্যন্ত এই জঙ্গিরা ধরা পড়েনি। যেখান থেকেই হোক এই জঙ্গিদের ধরা হোক।’

    জঙ্গিদের গতিবিধির আঁচ পেতে গোয়েন্দা ব্যর্থতার পাশাপাশি দেশের সংবেদনশীল তথ্য কী ভাবে পাকিস্তানে পাচার হচ্ছে— এই প্রশ্নও তুলেছেন মমতা। ভারতীয় সেনাকে কুর্নিশ জানাতে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় যে প্রস্তাব পেশ করেছিলেন, তা নিয়ে তুমুল তর্কবিতর্ক হলেও শাসক ও বিরোধী উভয়পক্ষ এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে। শুভেন্দু এই প্রস্তাবে ‘অপারেশন সিঁদুর’ শব্দবন্ধটি সংযোজন করতে চাইলেও পদ্ধতিগত কারণে তা সম্ভব হয়নি। পহেলগামে জঙ্গি হামলা ও ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার জন্য বিরোধীপক্ষের দাবি মোদী সরকার না–মানলেও দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভাতেই প্রথম এই ইস্যু নিয়ে আলোচনা হলো।

  • Link to this news (এই সময়)