এই সময়, চণ্ডীতলা: লুকোনো সম্পত্তির খোঁজে মঙ্গলবার সাত সকালে হুগলি জেলা পরিষদের শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে হানা দিয়ে খালি হাতে ফিরতে হলো কেন্দ্রীয় শুল্ক দপ্তরের অফিসারদের। যাওয়ার আগে সুবীরকে ক্লিনচিট সার্টিফিকেট দিয়ে গেলেন তাঁরা। তার বিনিময়ে শুল্ক দপ্তরের আধিকারিকদের নিজের লেখা কবিতার বই উপহার দিলেন হুগলির ওই তৃণমূল নেতা। এ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।
শাসক দলের অভিযোগ, ২০২৬–এর বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল নেতা–কর্মীদের চাপে রাখতেই কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে আসরে নামানো হয়েছে। ভোট যত এগিয়ে আসবে, এ রাজ্যে কেন্দ্রীয় এজেন্সির সক্রিয়তা ততই বাড়বে। গোটা ঘটনার পিছনে বিজেপির রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র দেখতে পাচ্ছে তৃণমূল। বিজেপি অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
হুগলির চণ্ডীতলা থানার গরলগাছা হাই স্কুলের পাশেই সুবীর মুখোপাধ্যায়ের নিজস্ব বাড়ি। তিনি শুধু জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষই নন, জেলা তৃণমূলের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা। আগামী বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে এর আগে সে অর্থে কোনও অভিযোগ ওঠেনি। স্বভাবতই তাঁর বাড়িতে শুল্ক হানা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ মহেন্দ্র নিবাসের (সুবীর মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির নাম) সামনে চারটি চারচাকা গাড়ি এসে দাঁড়ায়। সেই গাড়ি থেকে নেমে আসেন কেন্দ্রীয় শুল্ক দপ্তরের ১৫ জনের একটি দল। তাঁরা প্রথমে কলিং বেল বাজিয়ে বাড়ির লোকেদের দরজা খুলতে বলেন। ওই সময় সুবীরের স্ত্রী দরজার ভিতর থেকে তাঁদের পরিচয় জানতে চান।
শুল্ক দপ্তরের আধিকারিকরা পরিচয় দেওয়ার পরে তিনি ফের জানতে চান, বাড়িতে তল্লাশি চালানোর জন্য তাঁদের কাছে আদৌ কোনও সরকারি নির্দেশনামা আছে কি না? শুল্ক দপ্তরের আধিকারিকরা কাগজপত্র দেখানোর পরে তাঁদেরকে ভিতরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়। তার আগে সুবীর নিজেও শুল্ক আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এর মধ্যেই সুবীর জেলা পুলিশ প্রশাসন ও শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে বিষয়টি জানান।
বাড়িতে ঢোকার পরে তদন্তকারীরা সুবীর ও তাঁর স্ত্রী, কন্যা ও জামাতার ফোনগুলো নিয়ে নেন। এরপরে টানা তিনঘণ্টা ধরে চলে তল্লাশি। সুবীরের ডানকুনির একটি ফ্ল্যাটেও তল্লাশি চালানো হয়। তারই ফাঁকে শুল্ক আধিকারিকরা সুবীরকে বলেন, আপনারা তো বছর বছর বিদেশ ভ্রমণ করেন। উত্তরে সুবীর জানায়, বিদেশ যাওয়া তো দূরের কথা, তাঁদের কোনও পাসপোর্টই নেই। সুবীরের দোতলা বাড়ির প্রতিটি ঘরে ঢুকে তন্নতন্ন করে তল্লাশি চালান শুল্ক অফিসাররা। লোকনাথের বেদি, গ্যারাজ, গাড়ি, সমস্ত কিছু ভালো করে পরীক্ষা করা হয়।
কিছু না পেয়ে সকাল ১০টা নাগাদ তাঁরা সবাই বেরিয়ে যান। সেখান থেকে বিদায় নেওয়ার সময়ে সুবীর নিজের লেখা কুশীলব ও কবিতাওয়ালা নামে দুটি বই তদন্তকারীদের হাতে তুলে দেন।
পরে সুবীর বলেন, ‘এ দিন সাত সকালে কড়া নাড়া শুনে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। পরিবার নিয়ে থাকি। ভাবুন, পরিবারের উপর দিয়ে কী ঝড় বয়ে গিয়েছে। আমি রামকৃষ্ণ মিশনে লেখাপড়া করেছি। রাজনীতি আমার পেশা নয়, নেশা। বিজেপি চক্রান্ত করে বাড়িতে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে পাঠাচ্ছে। এ ভাবে আমাদের ভয় দেখিয়ে দুর্বল করা যাবে না। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখানো পথেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জবাব দেবো। সিপিএম জমানায় অনেক মিথ্যে মামলা হয়েছে। এ সবের ভয় পাই না। রাজনীতির ময়দানে জবাব দেব।’
বিজেপি নেতা স্বপন পাল বলেন, ‘শুল্ক দপ্তর স্বশাসিত সংস্থা। কোনও ভাবেই সেটা বিজেপি দ্বারা পরিচালিত হয় না। তৃণমূল আপাদমস্তক দুর্নীতিতে ভরা। শাসক দল আসলে সব কিছুতেই বিজেপির হাত দেখে।’