এই সময়, শিলিগুড়ি: দার্জিলিং ২৯। গ্যাংটক ৩২। কালিম্পং ৩৩। না, এটা কোনও ক্রিকেট ম্যাচের স্কোর নয়। বরং পাহাড়ের মঙ্গলবারের তাপমাত্রা। ঠান্ডায় জিরোতে যাঁরা পাহাড়ে ছুটে এসেছিলেন, তাঁরা এখন পাহাড়েরই গরমে সেদ্ধ হচ্ছেন। পাছে পর্যটক গরমের ভয়ে পালায়, তাই গ্যাংটক, কালিম্পং, কার্শিয়াংয়ে ঘরে ঘরে ফ্যান চালানো হচ্ছে। দার্জিলিংয়ে ম্যাল লাগোয়া হোটেলগুলিতে এখনও ফ্যান লাগানো না-হলেও চকবাজারের প্রায় সমস্ত হোটেলেই ফ্যান লাগানো হয়েছে। কার্শিয়াংয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঘরে ঘরে শোভা পাচ্ছে এয়ারকুলারও।
ক্যালেন্ডারে জুন মাস। ইতিমধ্যে মৌসুমী বায়ু ঢুকে পড়েছে। তবু বৃষ্টির লক্ষণ নেই। তার বদলে গরমে তেতেপুড়ে নাকাল হচ্ছেন পর্যটকরদের পাশাপাশি পাহাড়ের বাসিন্দারাও। কয়েকদিন আগেই কাঞ্চনজঙ্ঘার শৃঙ্গে বরফ দেখতে না-পেয়ে ‘গেল গেল’ রব উঠেছিল। বরফ গলে গিয়েই কাঞ্চনজঙ্ঘার শৃঙ্গ থেকে বরফ উধাও কি না, তা নিয়ে বিস্তর জল্পনা চলে। পরে নিম্নচাপজনিত বৃষ্টি এবং উত্তর সিকিমে ধসের জেরে সেই খবর চাপা পড়ে গেলেও গত কয়েকদিনের গরমে ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে উষ্ণায়ন।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের মতে, এই পরিস্থিতি সাময়িক। বরং দিনে এত গরম পড়লে সন্ধের পরে অবশ্যই বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়ে বৃষ্টি হবেই। এ দিনই যেমন বিকেলের দিকে গ্যাংটকে বজ্রবিদ্যুৎ–সহ বৃষ্টি নামে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘এই পরিস্থিতিকে অস্বাভাবিক বলা যাবে না। ধীরে ধীরে সর্বত্রই তাপমাত্রা বাড়ছে। তা ছাড়া মৌসুমী বায়ু এই এলাকায় এখনও সক্রিয় নয়। জুনের ১৫ তারিখের পর থেকে সক্রিয় হতে পারে। তখন তাপমাত্রা আবার সহনীয় হয়ে উঠবে।
পাহা়ডের বাসিন্দাদের বক্তব্য, তাপমাত্রার এমন খামখেয়ালিপনার শুরু মোটামুটি ২০১৭ সাল নাগাদ। তার পর থেকে তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। সোমবারই গ্যাংটকে তাপমাত্রা ছিল সাড়ে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গনে ৩১ ডিগ্রি, দার্জিলিংয়ে প্রায় সাড়ে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শিলিগুড়িতে ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ দিন শিলিগুড়িতে দু’ডিগ্রি বেড়ে ৩৯। গ্যাংটকের সাচে এলাকার হোটেল মালিক কল্পক দে বলেন, ‘২০১৭ সালে আমি টের পাই, এত গরমে পর্যটকদের হোটেলের রুমে রাখা সম্ভব নয়। ঘরে ঘরে ফ্যান লাগিয়ে দিই। সেই ব্যবস্থাই এখনও চলছে। আজ তো তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি ছুঁয়ে গিয়েছে। পাহাড়ে এত গরম আগে কখনও টের পাইনি।’
দার্জিলিংয়ের অবস্থা এখনও খারাপ নয়। তার পরেও সারা বছর ঠান্ডায় কাটানো যাঁদের অভ্যাস, তাঁদের পক্ষে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসও বেশ কষ্টকর। নেহরু রোডের কাছে এক হোটেল মালিক স্বপন বিশ্বাস বলেন, ‘ম্যাল লাগোয়া হোটেলগুলিতে এখনও ফ্যান লাগাতে হয়নি। এই এলাকা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ফুট উঁচুতে। রাস্তায় গরম লাগলেও ঘরে তেমন একটা গরম লাগে না। বিকেলের পরে ঠান্ডা নেমে আসে। তবে চক বাজারের হোটেল, দোকান, রেস্তোরাঁয় ফ্যান লাগানোর কথা আমিও শুনেছি।’
প্রায় এক দশক হল কার্শিয়াংয়ে ঘরে ঘরে ফ্যান ঢুকেছে। এ বছর অনেকে এয়ার কুলারও লাগানো শুরু করেছেন। যদিও ডাউহিল কিন্তু এখনও মনোরম। কার্শিয়াংয়ের বাসিন্দা দিগম্বর গজমের বলেন, ‘পাহাড়ের আবহাওয়াও বদলে যাচ্ছে। এমন গরম আমাদের ছোটবেলায় ছিল না। জানি না কোন দিকে যাচ্ছি আমরা।’