• আবাসনে কারা? জানা নেই স্থানীয়দের
    এই সময় | ১১ জুন ২০২৫
  • সঞ্জয় দে, দুর্গাপুর

    সরকারি জমি দখল করে বিক্রির ঘটনা এই শহরে নতুন নয়। পুরসভার ৪৩টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় সরকারি জমি দখল করে কোথাও দোকান, কোথাও বসত বাড়ি তৈরি হয়েছে। কিন্তু তাতে আসানসোল–দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ) বা দুর্গাপুর পুরসভার কোনও লাভ হচ্ছে না। কোনও রাজস্ব পায় না তারা। লাভ হচ্ছে শাসকদলের স্থানীয় কিছু কর্মীর। এমনটাই অভিযোগ।

    বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এমএএমসি টাউনশিপের ফাঁকা আবাসনও দখল করে বাস করছেন প্রচুর বহিরাগত। শাসকদলের কিছু কর্মী এদের থেকে প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা আদায় করছে। সরকারি জমি ও আবাসন দখল হচ্ছে। সেখান থেকে প্রতি মাসে কয়েক লক্ষ টাকা আদায় করছে শাসকদলের স্থানীয় কিছু কর্মী।

    এমএএমসি টাউনশিপের ফাঁকা আবাসন যে ভাবে দখল হচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন স্থানীয়রা। টাউনশিপের এক বাসিন্দা অসীম চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘এখানে আবাসনের সংখ্যা ৪১৪৪। এডিডিএ–র হিসেব অনুযায়ী প্রায় ৩০০ আবাসন দখল হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সংখ্যাটা আরও বেশি। বহিরাগতদের আবাসনে ঢুকিয়ে মোটা টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।’

    এ প্রসঙ্গে এডিডিএ চেয়ারম্যান কবি দত্ত বলছেন, ‘এমএএমসি আবাসনে সমীক্ষার কাজ চলছে। যাঁরা দখল করে আছেন, তাঁদের সরে যেতে হবে। কাদের টাকা দিয়ে আবাসনে বাস করছেন তাঁরা, তা দেখা হবে না। সার্ভের কাজ শেষ হলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। তার পরে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে।’

    পুরসভার ২৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ড সিটি সেন্টার অঞ্চল লাগোয়া বলে এখানে সব থেকে বেশি সরকারি জমি দখল হয়েছে। বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে প্রচুর মানুষ এখানে দখল করা সরকারি জমি কিনে বসবাস করছেন। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা বলছিলেন, ‘এক থেকে দেড় কাঠা জমি দখল করে প্রায় এক লাখ টাকায় বহিরাগতদের বিক্রি করা হচ্ছে। জমির মাপ বেশি হলে দেড় লাখ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এদের নাম–পরিচয় কিছু জানা যাচ্ছে না। বাইরে কোনও অপরাধ করে এখানে আশ্রয় নিচ্ছে কি না, বোঝা মুশকিল।’ যোগ করছেন, ‘বহিরাগতদের প্রবেশ রোখা না–গেলে শহরে অপরাধমূলক কাজকর্ম বাড়বে। অথচ এদের জন্য পুরসভা পাকা রাস্তা, নিকাশি, পানীয় জলের ব্যবস্থা করেছে।’

    এ দিকে, সরকারি জমি দখল করে রাস্তার ধারে প্রচুর ফাস্টফুডের দোকান তৈরি হয়েছে। একাধিক বার তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে, কিন্তু কিছুদিন পরে ফের দোকানগুলি গজিয়ে উঠেছে। প্রথমে ঠেলা গাড়িতে করে দোকান, কিছুদিন যেতেই গাড়ির চারধারে বাঁশ পুতে মাথার উপরে ত্রিপল দিয়ে তৈরি হচ্ছে অস্থায়ী দোকান। স্থানীয়দের দাবি, বড় শহরগুলিতে স্ট্রিটফুডের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকে। দুর্গাপুরেও তা হোক। এডিডিএ চেয়ারম্যানের বক্তব্য ‘রাস্তার ধারে সরকারি জমি দখল করে সার দিয়ে দোকান দেখতে খারাপ লাগে। একাধিক বার উচ্ছেদ করা হয়েছে। তার পরেও কী ভাবে ফের বসছে, জানি না। রাস্তার ধারে সরকারি জমি দখল করে দোকান করা যাবে না।’

    সম্প্রতি কোক-ওভেন থানা এলাকায় কয়েকজন ভিন রাজ্যের দুষ্কৃতী ডেরা বেধেছিল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। এডিডিএ–র এক আধিকারিক বলছিলেন, ‘সরকারি জমি দখল করে যদি বহিরাগতরা ডেরা বাঁধে, আমাদের হেল্পলাইন নম্বরে (৯০৪৬২২৩৬৫০) হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)