সমীর মণ্ডল, শালবনি
'গাছে থাকে পাখি.../পাখি ফল খায়। পাখা মেলে ওড়ে...'। কিন্তু সেই পাখিকে যদি কেউ বিরক্ত করে? সমস্বরে ওঁরা বলছেন, 'আমরা আছি না! একটি পাখিরও কোনও ক্ষতি হতে দেবো না। ওরাও আমাদের পড়শি।'
তা কথাটা নেহাত কথার কথা নয়। গ্রামের কেউ না কেউ সর্বক্ষণ নজরদারি চালাচ্ছেন। অচেনা মুখ দেখলেই জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। আগন্তুক চোরাশিকারি কি না, সে সম্পর্কেও নিশ্চিত হচ্ছেন। আপাতত, পাখিদের রক্ষা করতে জোট বেঁধেছেন ওঁরা।
গ্রামের নাম কুলডিহা। জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর। এক সময়ে জঙ্গলমহলের অন্তর্গত এই এলাকা ছিল মাওবাদী প্রভাবিত। রাতভর শোনা যেত গুলির শব্দ। সে সব এখন অতীত। এখন সকাল, বিকেল পাখিদের ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ ভাসে গ্রামের বাতাসে। পাখির ডাকে ঘুম ভাঙে গ্রামের। তারপরে তারা উড়ান দেয়। গ্রামের লোকজনও কাজে বেরোন। বিকেলে ওঁদের সঙ্গে সব পাখিও ডানা মুড়ে বাসায় ফেরে।
কুলডিহার নিরাপদ আশ্রয়ে নিজেদের মতো সংসার পেতেছে শামুকখোল, বাবুই, টিয়া, মাছরাঙা, পায়রা, ফিঙে, বুলবুল। এ ছাড়াও রয়েছে বকের দল। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, 'ওদের আগলে রাখাটা আমাদের দায়িত্ব।'
এক সময়ে পাখিদের রক্ষা করতেন রেশন ডিলার বুদ্ধেশ্বর মাহাত। তাঁর বাড়ির পাশে ছিল বিশাল এক তেঁতুলগাছ। পাখিদের প্রিয় আশ্রয়। বর্ষার আগে অজস্র শামুকখোল, বক আর বাদুড় ভিড় করত সেখানে। বছর তিনেক আগে ঝড়ে ভেঙে পড়ে সেই তেঁতুলগাছটি। পাখিরা কয়েক দিনের জন্য দিশাহারা হয়ে পড়লেও গ্রাম ভছাড়েনি। অন্য গাছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গড়ে নিয়েছে নতুন বাসা।
এখন বুদ্ধেশ্বর মাহাত এক নন, পক্ষীকুলকে রক্ষা করতে জোট বেঁধেছে গোটা গ্রাম। প্রবীণ বাসিন্দা চুনারাম মাহাতর কথায়, 'তেঁতুল গাছ ভেঙে যাওয়ার পরে পাখিগুলো গ্রামে ত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গিয়েছে। ওদের যাতে কেউ বিরক্ত না করে সে দিকে আমরা সকলেই কড়া নজর রাখি।' গ্রামে কেউ পাখি শিকার করতে এলে আর রক্ষে নেই! দীননাথ মাহাত বলছেন, 'আগে এয়ারগান, গুলতি নিয়ে কিছু লোকজন পাখি মারতে আসত। বন দপ্তর ও পুলিশে খবর দিয়ে আমরা তাদের ধরিয়ে দিয়েছি। এখন আর কেউ সাহস দেখায় না।'