• সব আছে, শুধু চেনা মুখ-চেনা সুখ নেই
    এই সময় | ১১ জুন ২০২৫
  • পদ্মাসনা বন্দ্যোপাধ্যায়, নিউ জার্সি

    আমি একান্নবর্তী পরিবারের মেয়ে। দাদু ছিলেন চা–বাগানের ম্যানেজার। আর ঠাকুরদা ট্রেড ইউনিয়ন নেতা। চা-বাগানের সঙ্গে তাই আমার নিবিড় বন্ধুত্ব। দিনের যে কোনও সময়ে বাড়িতে চা খাওয়ার চল ছিল। এখানে সেটা আর ধরে রাখতে পারিনি ঠিকই, কিন্তু চা বলতে আমি দার্জিলিং চা-ই বুঝি। ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়েছি গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুলে। স্কুলে প্রার্থনার পরে ‘দিনের বাণী’ এখনও আমার চলার পথের পাথেয়। স্কুলের সীমাদি, অমিতাদি, শম্পাদি, চম্পাদি, মাধবীদি, মণিদীপাদি, রুনাদির অবদান আমার এবং আমার মতো অনেকের জীবনেই অপরিসীম।

    উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে লেডি ব্র্যাবোর্ন কলেজ এবং তার পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করি। কলকাতায় প্রায় এক যুগ ছিলাম। তার পরে চাকরি, বিয়ে। আজ প্রায় ২০ বছর হলো নিউ জার্সিতে। এখানেও আবার পড়াশোনা, চাকরি আর ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার করছি। ব্যস্ত জীবন। বন্ধুও আছে অনেক। দেশের প্রায় সব জিনিসই এখানে পাওয়া যায়। পাই না শুধু বাড়ির লোকজন, চেনা গন্ধ, চেনা মুখ, চেনা সুখ। মা, ভাই, পরিবার আর আমার বন্ধুদের টানে প্রতি বছরে জলপাইগুড়িতে নিয়ম করে যাই। ফিরে আসি একমুঠো টাটকা বাতাস নিয়ে।

    বাঙালির সব উৎসব আর পুজো— কিছুই বাদ পড়ে না এখানে। কিন্তু, পরেশের মোগলাই, নয়াবস্তির মোমো, যোগমায়া কালীবাড়ির ভেজ চপ এখানকার ঠান্ডায় খুব মিস করি। মনে পড়ে তিস্তা চরের পিকনিক, কলামন্দিরে লাইন— এমন কতকিছু! জলপাইগুড়ি স্টেশনের সঙ্গেও আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। ভুলতে পারি না কাকুর সঙ্গে পুজোর কেনাকাটা, দিদার সঙ্গে বাজার করতে যাওয়া আর মা–বাবার সঙ্গে প্রায় প্রতি মাসেই ডুয়ার্স ভ্রমণ। এখনও এ সব কিছুই আছে আমার জীবনে। তবে একটু অন্য ভাবে, অন্য নামে। আমার বাড়ির লক্ষ্মীপুজোর আয়োজন সব বন্ধুরা এসে একসঙ্গে করে। পয়লা বৈশাখ, বিজয়া—সবেতেই আমাদের ষোলো আনা বাঙালিয়ানা বজায় থাকে।

    এখনও ভ্রমণ হয়। তবে পাহাড় আর জঙ্গলের নাম–ঠিকানা বদলে যায়। এখন জলপাইগুড়ি গেলে দেখি, পুরোনো মানুষের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। তবুও মনে হয়, মানুষের প্রতি মানুষের এত টান এবং সহযোগিতার মনোভাব অন্য জায়গায় পাওয়া যায় না। কোভিডের সময়ে এটা আরও বেশি করে উপলব্ধি করেছি। আমাদের পাড়ার ছেলেরা, আমার মায়ের ছাত্রছাত্রী এবং সহকর্মীরা কত আন্তরিক ভাবে আমার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁরা সবাই যে রক্তের সম্পর্কের, এমন নয়। তবুও তাঁরাই আমার পরম আত্মীয়।

    (অনুলিখনঃ সুদীপ দত্ত)

  • Link to this news (এই সময়)