অরূপ লাহা: চৈতন্যদেবের (Sri Chaitanya Dev) পদধূলিধন্য পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের কুলীনগ্রামে জগন্নাথের জন্মতিথি উপলক্ষে জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা (Jaganath Snan Yatra) পালিত হল। বুধবার সকালে স্নানযাত্রা তিথিতে মূল গর্ভগৃহ থেকে স্নানবেদীতে আনা হল জগন্নাথ বলরাম ও সুভদ্রাকে। সেখানে এনে তাঁদের স্নান করানো হল দুধ গঙ্গাজল দিয়ে। সারাদিনব্যাপী পূজাঅর্চনাও হল। কলিতে যিনি জগন্নাথ, বিশ্বাস, দ্বাপরে তিনিই ছিলেন শ্রীকৃষ্ণ।
৫০০ বছরের ধারা
পাঁচশো বছরের প্রাচীন রীতি মেনে কুলীন গ্রামে জগন্নাথের মন্দিরের স্নানবেদীতে সারাদিন পুজো অর্চনা ও ভোগ বিতরণের পাশাপাশি, সন্ধ্যার পর জগন্নাথ বলরাম ও সুভদ্রাকে মূল মন্দিরের গোপন কুঠরিতে রাখা হল। ১৩ দিন এই গোপন কুঠরিতে থাকবেন তাঁরা। পরে আমাবস্যা তিথিতে তাঁদের সুসজ্জিত করে কলসের মাধ্যমে পূজা করা হবে। তার পরেই দেশ জুড়ে পালিত হবে রথযাত্রা।
কুলীন-পুরী চৈতন্যযোগ
পুরীর জগন্নাথদেবের রথযাত্রার সঙ্গে আজও অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে কুলীন গ্রামের নাম। চৈতন্যদেবের পদধূলিধন্য কুলীনগ্রাম পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রাচীন জনপদ। এখানকার রথযাত্রা উৎসব ৫০০ বছরেও বেশি প্রাচীন। চৈতন্যদেবের আদেশ মেনে পুরীর জগন্নাথের রথের জন্য এই কুলীনগ্রাম থেকেই পাঠানো হত রেশমের পট্টডোরী। রথের অনেক আগেই পট্টডোরী কুলীনগ্রাম থেকে পৌঁছে দেওয়া হত পুরীতে। সেই প্রথা এখন না থাকলেও কুলীন গ্রামের রথ-মাহাত্ম্য এখনও অটুট। তাই রথযাত্রার আগেই ভারতবিখ্যাত পুরীর রথের সঙ্গে বহুকাল আগে থেকে ভক্তি-ভাবের সম্পর্ক গড়ে ওঠে কুলীনগ্রামের রথের।
'শ্রীকৃষ্ণবিজয়ে'র মালাধর বসু
কথিত আছে, এই কুলীন গ্রামের বসু পরিবারই কুলীনগ্রামে রথযাত্রা উৎসবের সুচনা করেছিলেন।পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে কুলীন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাংলা সাহিত্যের অমূল্যগ্রন্থ 'শ্রীকৃষ্ণবিজয়' কাব্যের রচয়িতা মালাধর বসু। এই মালাধর বসুর পৌত্র লক্ষ্মীকান্ত বসু সত্যরাজ খান নামে ভূষিত হয়েছিলেন। তিনি শ্রীচৈতন্য দেবের অন্যতম ভক্ত ও পার্ষদ ছিলেন। পুরীর জগন্নাথদেবের রথের জন্য কুলীনগ্রাম থেকে পট্টডোরী পাঠানোর আদেশ সত্যরাজ খানকে করেছিলেন স্বয়ং শ্রীচৈতন্যদেব। ভক্ত সত্যরাজ খান সেই আদেশ মাথা পেতে পালন করেছিলেন।