• স্থগিত নয়, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে স্মার্ট মিটার বসানো পুরোপুরি বাতিলই করল রাজ্য! সিদ্ধান্তের কথা বিধানসভায় জানালেন মন্ত্রী
    আনন্দবাজার | ১১ জুন ২০২৫
  • রাজ্যে স্মার্ট মিটার বসানো পুরোপুরি বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে। বুধবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় এমনটাই জানালেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। সরকারি বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া উপভোক্তাদের বাড়িতে স্মার্ট মিটার বসানো আগেই স্থগিত করে দিয়েছিল রাজ্য সরকার। এ বার বিধানসভায় অরূপ স্পষ্ট করে দিলেন, স্মার্ট মিটার বসানো পুরোপুরিই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

    বুধবার বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, স্মার্ট মিটার নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এ বিষয়ে বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপকে বিবৃতি দেওয়ার জন্য বলেন তিনি। সেই সময়েই স্মার্ট মিটার প্রসঙ্গে অধিবেশন কক্ষে সরকারের অবস্থান জানান তিনি। অরূপ বলেন, “আমার বিজেপির বন্ধুরা প্রায়ই স্মার্ট মিটার নিয়ে অভিযোগ করেন। কিন্তু তাঁরা আসল সত্যিটা জানেন না।” এর পরেই দু’টি গেজ়েট বিজ্ঞপ্তি হাতে তুলে তিনি বলেন, “এই দু’টি গেজ়েট নোটিফিকেশন প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় সরকার বলপূর্বক আমাদের উপর স্মার্ট মিটার বসানোর দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু আমাদের জনদরদি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিয়েছেন স্মার্ট মিটার লাগানোর কাজ বন্ধ করে দিতে হবে। তাই স্মার্ট মিটার লাগানোর কাজ আমরা বন্ধ করে দিয়েছি।”

    গত সোমবারই রাজ্য বিদ্যুৎ দফতর স্মার্ট মিটার সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি দফতর এবং টেলিকমিউনিকেশন টাওয়ারের মতো জায়গায় ‘সফল ভাবে’ স্মার্ট মিটার লাগানো হয়েছে। তার পরে তিন-চারটি জেলায় কিছু সংখ্যক উপভোক্তার বাড়িতেও পরীক্ষামূলক ভাবে স্মার্ট মিটার বসানো হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বিদ্যুৎ দফতর আরও জানিয়েছিল, স্মার্ট মিটার নিয়ে কিছু অভিযোগ পেয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার জন্য আপাতত উপভোক্তাদের বাড়িতে স্মার্ট মিটার বসানো বন্ধ রাখা হচ্ছে। ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দু’দিন পরেই বিদ্যুৎমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন, স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ বন্ধই করে দেওয়া হয়েছে রাজ্যের তরফে।

    পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বণ্টন নিগম আগে যে নিয়মে বিল পাঠাত, সেই মতোই বিদ্যুতের বিল পাঠাবে বলে আশ্বস্ত করেন অরূপ। তিনি আরও জানান, বর্তমানে যে সব স্মার্ট মিটার বসানো রয়েছে, সেগুলিকেও সাধারণ মিটারে রূপান্তরিত করা হবে। কয়েক জায়গায় পরীক্ষামূলক ভাবে স্মার্ট মিটারের কাজ দেখানো হবে, তবে সেগুলি কোনও ভাবেই গৃহস্থের বাড়ির ক্ষেত্রে হবে না। এ নিয়ে অযথা আশঙ্কা করার কোনও কারণ নেই বলেও জানান তিনি। তবে এই সিদ্ধান্ত শুধু গৃহস্থের বাড়ির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি না, তা অধিবেশনে মন্ত্রীর বিবৃতি থেকে স্পষ্ট হয়নি। পরে প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, শুধু বাড়িতে বাড়িতে নয়, বাণিজ্যিক এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে।

    কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোলা মন্ত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানান, “এ কথা ঠিক নয়। কিছু বিষয় রাজ্যের অধীনে, আবার কিছু বিষয় কেন্দ্রের আইনে চলে। বিদ্যুতের স্মার্ট মিটার বসানোর ক্ষেত্রে নীতিটি রাজ্য সরকারের। কেন্দ্রীয় সরকারের নয়। বিদ্যুৎ মন্ত্রী যা বলেছেন, সেটি অসত্য।”

    বিদ্যুতের স্মার্ট মিটার বিতর্কের পাশাপাশি বুধবার রাস্তা নিয়েও বিভিন্ন অভিযোগের কথা উঠে এসেছে বিধানসভায়। বিধানসভায় একটি অভিযোগ বাক্স বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পূর্ত দফতর। একাধিক বিধায়ক রাস্তা নিয়ে অভিযোগ করায় বিধানসভার স্পিকার বিমানের নির্দেশে ‘ড্রপ বক্স’-এর ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নেন পূর্ত দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী পুলক রায়। বৃহস্পতিবার থেকেই এই অভিযোগ বাক্সের ব্যবস্থা করা হবে। সেখানে সব বিধায়ক নিজেদের বিধানসভা এলাকায় রাস্তা সংক্রান্ত অভিযোগ জানাতে পারবেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে পদক্ষেপ করবে পূর্ত দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা।

    এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতালে মাত্রাতিরিক্ত বিল নেওয়া রুখতে সংশোধনী বিলও আনা হচ্ছে বিধানসভায়। আগামী সপ্তাহে এই বিল বিধানসভায় পেশ করা হবে। সেই আলোচনায় অংশ নিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই দিন বিধানসভায় মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে বৈঠকও করার কথা তাঁর। তাই ওই বৈঠকে যোগদানের পাশাপাশি এই বিল নিয়ে আলোচনাতেও অংশ নিতে পারেন তিনি।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)